চট্টগ্রাম বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

পানি উন্নয়ন বোর্ড : পুরোনো চাপ-আবদার নতুনরূপে
ফাইল ছবি

পানি উন্নয়ন বোর্ড : পুরোনো চাপ-আবদার নতুনরূপে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৫ এপ্রিল, ২০২৫ | ১২:৩২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে বেড়িবাঁধ, ব্লক ও স্লুইস গেট নির্মাণসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিভিন্ন কাজে নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ, কাজের ভাগ ও কাজ পেতে বাড়ছে রাজনৈতিক চাপ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সহিংসতা ও গোলাগুলির কারণে কাজ বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। চাপ ও আবদার রক্ষায় দিতে হচ্ছে ছোট বাজেটের কাজ। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তারা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পটিয়ায় ১১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পে ২১টি স্লুইস গেট, ব্লক ও ফ্লাডওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। গত সরকার আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি ও কমিশন বাণিজ্যের বড় অভিযোগ রয়েছে।

 

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ নিয়ে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়। পটিয়ার আশিয়া ইউনিয়নে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ একটি স্লুইট গেটের কাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার এই অভিযোগ করেছেন ঠিকাদার ও বিএনপি নেতা মো. এমরান।

 

অভিযোগে মো. এমরান দাবি করেন, শ্রমিকদের মারধর করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২ শতাংশ কমিশন দাবি করে আসছে। ১০-১৫ জন লোক চাঁদার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।’ স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন দাবি করে বিএনপি নেতা এমরান বলেন, ‘সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে শেষতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করতে বাধ্য হয়েছি।

 

অভিযোগের বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন বলেন, এমরান কে আমি চিনি না। কখনো দেখিনি। নিম্নমানের বালু-পাথরসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে পাইলিং করছিল ঠিকাদার। আমার বাড়ির পেছনের কাজ হিসেবে এলাকাবাসীর অনুরোধে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি। ঈদের পর থেকে উন্নতমানের বালু ও পাথর দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঠিকাদার। তারপরও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, দু-এক জায়গায় সমস্যা হয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

 

পাউবো সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঊচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আগে কাজ পেতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করতো। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর কয়েক মাস চাপমুক্ত ছিল। এখন বিভিন্ন উপজেলা থেকে নতুন করে তদবির ও চাপ আসছে। আবদার রক্ষায় ছোট বাজেটের কাজ দিয়ে সামাল দিতে হচ্ছে।

 

আনোয়ারায় গোলাগুলি:
২০২৪ সালের ২৭ মে আনোয়ারা, বাঁশখালী ও বোয়ালখালী উপজেলায় ভাঙন প্রতিরোধে হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। আনোয়ারা ও বাঁশখালীর প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৮৭৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে আনোয়ারা উপজেলায় ৩২০ কোটি টাকা এবং বাঁশখালী উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। বোয়ালখালীর ভাঙনরোধ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

 

ইতিমধ্যেই আনোয়ারার রায়পুর এলাকার একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কাজ শুরু করতে গিয়েই বিপত্তিতে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

পাউবো জানায়, ৫৬ কোটি টাকায় বাঁধ ও ব্লক নির্মাণের কাজ পায় এমদাদুল আল মামুন নামে ঠিকাদার। ওই ঠিকাদারকে ইট-বালুসহ নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করে আসছে বিএনপির এক নেতা। তাতে ক্ষিপ্ত হয় বিএনপির অন্য গ্রুপ। এ নিয়ে গত সোমবার উপ-ঠিকাদারি কাজের ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি-সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন।

 

নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, সংঘর্ষের কারণে কাজ বন্ধ হয়নি। সংঘাতের পর দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা আর প্রকল্প এলাকায় যাননি।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট