তিন বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে বাতি জ্বললো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিনের। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামতের পর গতকাল বুধবার চালু করা হয় মেশিনটি। তবে আরও কিছুদিন পরীক্ষামূলক চলার পর তা শিগগিরই রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেশিনটি সচলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ বছর ধরে স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে দরকষাকষি চললেও সে গিট খোলে চলতি বছরের মধ্য জানুয়ারিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউএন্ডটিসি) এর সাথে মেশিনটি সচল করতে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় চুক্তি হয় সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডের। এরপর মেশিনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানির পাশাপাশি চলতি মাসের শুরু থেকে তা সচল করতে কাজ শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলীরা। এতদিন নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজনের পাশাপাশি ত্রুটি সারানোর পর গতকাল সকালে চালু হয় এমআরআই মেশিনটি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন মেশিন চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা দীর্ঘদিন ধরে মেশিনটি মেরামত করেছেন। বুধবার (গতকাল) সকালে মেশিনটি চালু হয়েছে। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে আরও কিছুদিন এটি চালাব। এরপর মেশিনটি রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। যেহেতু নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে এবং দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল, তাই অন্তত সপ্তাহখানেক মেশিনটি পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রায় দশ কোটি টাকায় কেনা এমআরআই মেশিনটি স্থাপন করা হয় চমেক হাসপাতালে। চুক্তি অনুযায়ী মেশিনটির ওয়ারেন্টি ছিল ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু তিন বছর না যেতেই ত্রুটি শুরু হয় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এ মেশিনটির। এরপর বারবার বিকল হতে থাকে এ যন্ত্র। সর্বশেষ ২০২২ সালের মে মাসে বিকল হয় জাপান থেকে কেনা এমআরআই মেশিনটি। জাপানি ‘হিটাচি ১.৫ টেসলা’র অত্যাধুনিক মেশিনটি সরবরাহ করে ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একমাত্র মেশিনটি সচলের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অন্যান্য দপ্তরে বহু সংখ্যক চিঠি চালাচালি করা হয়। সরকারিভাবেও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় কোনভাবেই এতদিন সচল করা যায়নি এমআরআই মেশিনটি। যার কারণে একপ্রকার ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এ কারণে অচল হয়ে পড়ে ছিল মেশিনটি।
এদিকে, দীর্ঘ বছর ধরে একমাত্র মেশিনটির সচল না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। সেবা বন্ধ থাকায় নিরূপায় হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি ল্যাবগুলোতে। এতে করে চমেক হাসপাতালের চেয়েও তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি অর্থ গুণতে হচ্ছে রোগী-স্বজনদের। এছাড়াও মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল-ল্যাবে ছোটাছুটি করে হচ্ছেন গলদঘর্ম অবস্থা।
পূর্বকোণ/জেইউ