পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে শাহ আমনত সেতু-পটিয়া রুটে চলাচল করছে ১৯১টি হিউম্যান হলার। শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর সড়কের উপর থেকে যানবাহনগুলো ছাড়া হয়। অথচ যানবাহনগুলোর নেই ফিটনেস; নেই কোন রুট পারমিট। এমনকি শাহ আমানত সেতু-পটিয়া নামে কোন রুটও নেই বিআরটিএ কিংবা আরটিসির তালিকায়।
গাড়িগুলো থেকে প্রতিমাসে চাঁদাবাজি হচ্ছে কমপক্ষে ১৪ লাখ টাকা। এসব চাঁদার ভাগ যাচ্ছে শ্রমিক নেতা পরিচয়ধারী কিছু ব্যক্তি ও ট্রাফিকের পকেটে। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। ট্রাফিক বিভাগ কিংবা বিআরটিএ; অবৈধ এসব যানবাহনের ব্যাপারে যেন কারও মাথাব্যথা নেই।
নগর ট্রাফিকের দক্ষিন জোনের উপকমিশনার (ডিসি) লিয়াকত আলি জানান, শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর এলাকা বাসস্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। বাস, মিনিবাস, মাহিন্দ্রা কিংবা হিউম্যান হলারের পাশাপাশি গ্রাম সিএনজি ট্যাক্সি ও ব্যাটারিচালিত রিকশার উপদ্রব বেড়েছে। আমরা অবৈধ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি।
রুট পারমিট ছাড়া অবৈধভাবে হিউম্যান হলার চলাচল প্রসঙ্গে ডিসি লিয়াকত জানান, একসঙ্গে সব যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে মালিক-শ্রমিকরা সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে আন্দোলন করে বসে। রুট পারমিট ছাড়া কোন যানবাহন চলাচল করে থাকলে খোঁজ নিয়ে বন্ধ করে দেয়া হবে।
জেলা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) রায়হানা আক্তার উর্থি জানান, শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর থেকে পটিয়া পর্যন্ত হিউম্যান হলারের অনুমোদিত কোন রুট নেই। যদি চলাচল করে থাকে তা অবৈধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) তালিকায় নগরীতে হিউম্যান হলারের রুট আছে ১৮টি। সেখানে শাহ আমানত সেতু থেকে পটিয়া নামে কোন রুট নেই।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরের সড়কের উপর থেকে একের পর এক হিউম্যান হলার ছাড়া হচ্ছে পটিয়ার উদ্দেশ্যে। গাড়িগুলো দাঁড়ানোর কোন স্ট্যান্ড নেই সেখানে। সড়কের উপর থেকে নির্বিঘ্নে গাড়িগুলো ছাড়া হচ্ছে।
জানা যায়, ১৯১টি হিউম্যান হলার চলছে বিলাসী ও মিনি মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণে। এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি পুরো লাইন থেকে শুরু করে চাঁদা উঠানো- সবকিছুই তদারকি করছেন। প্রতি গাড়ি থেকে মাসিক ২০০০, টার্মিনাল ও পৌরসভা ফি’র নামে দিনে ১০০, লাইন খরচের নামে শাহ আমানত সেতু এলাকায় প্রতি গাড়ি থেকে দিনে ২০, শান্তির হাট এলাকায় দিনে ৩০ ও বাদামতল এলাকায় দিনে ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। সবমিলিয়ে মাসে ১৪ লাখ টাকারও বেশি চাঁদা তোলা হচ্ছে ১৯১টি গাড়ি থেকে। এসব টাকার ভাগ যাচ্ছে শ্রমিক নেতা পরিচয়ধারী ব্যক্তি ও ট্রাফিকের পকেটে।
শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর থেকে পটিয়া রুটে হিউম্যান হলার রয়েছে মোহাম্মদ শফির। তিনি নিজেই গাড়ির চালক। জানতে চাইলে শফি জানান, তার হিউম্যান হলারের রুটি পারমিট কোন সড়কের তা মনে নেই। বিভিন্ন জায়গার গাড়ি নতুন ব্রিজ-পটিয়া রুটে চলাচল করছে। সব জায়গায় টাকা দিয়ে গাড়িগুলো চালানো হয়। পুরো লাইনটি নিয়ন্ত্রণ করেন এনামুলের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি।
মোহাম্মদ ইউনুছ নামে আরেকজন জানান, দুই বছর ধরে ওই রুটে তার একটি হিউম্যান হলার চলাচল করছে। তিনি নিজেই গাড়িটির চালক। অন্যদের মতো তিনি সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় টাকা দিয়ে গাড়ি চালান বলে জানান।
আরটিসির (মেট্রো) সদস্য অলি আহমেদ জানান, শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর থেকে পটিয়া নামে কোন রুট আরটিসির তালিকায় নেই। যদি ওই রুটে গাড়ি চলাচল করে থাকে তাহলে অবৈধভাবে চলছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হিউম্যান হলার লাইন নিয়ন্ত্রণকারী এনামুল হক জানান, কক্সবাজার পর্যন্ত কিছু গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে। লাইনে তার নিজেরও একটি গাড়ি আছে। কিছুদিন ধরে গাড়ির লাইনটি তিনি দেখভাল করছেন।
কক্সবাজার পর্যন্ত রুট পারমিটের গাড়ি পটিয়া পর্যন্ত চলাচল করা প্রসঙ্গে এনামুল জানান, যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আমরা পটিয়া পর্যন্ত গাড়ি চালায়। ট্রাফিক বিভাগও বিষয়টি জানে। শাহ আমানত সেতু-পটিয়া নামে কোন রুট অনুমোদন না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনামুল জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। হিউম্যান হলারগুলো বিলাসী ও মিনি মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণে চলাচল করে।
জানতে চাইলে মিনি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন জানান, হিউম্যান হলার আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে না। মিনিবাসগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে।
পূর্বকোণ/ইব