চট্টগ্রাম শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

উধাও ‘সবুজ গালিচা’ ফিরবে আউটার স্টেডিয়ামে
উদাসীনতায় উধাও আউটার স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস (চলমান বৃষ্টি শুরুর পূর্বে নেওয়া ছবি), (ইনসেটে) সবুজ গালিচায় রুপ দেওয়ার জন্য সংস্কার কাচ চলাকালে আউটার স্টেডিয়াম (ফাইল ফটো)। পূর্বকোণ

ফের উদ্যোগ নিচ্ছে জেলা প্রশাসন

উধাও ‘সবুজ গালিচা’ ফিরবে আউটার স্টেডিয়ামে

হুমায়ুন কবির কিরণ

২২ এপ্রিল, ২০২৫ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

জলাধার, ময়লা আবর্জনায় ঠাসা, মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডা ও গাড়ি রাখার টার্মিনালে পরিণত হওয়া কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়ামের সুদিন ফেরাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)’র অর্থায়নে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। প্রকল্পের আওতায় কয়েকমাস ধরে মাঠে ঘাস লাগানো হয়। ঘাস গজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল স্প্রেডিং পদ্ধতি। চলে নিয়মিত পরিচর্যা। মাঠের চারপাশে দেওয়া হয় লোহার বেষ্টনী। এর আগে শেষ করা হয় বালু ভরাট ও ফিনিশিংয়ের কাজ। পরিকল্পিত এসব কাজের কারণে দীর্ঘদিন পর সবুজে ঢেকে যায় অনেকের পছন্দের আউটার স্টেডিয়াম। এর আগে প্রায় দু’দশক মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনের চাপে, পতিত জমিতে পরিণত হওয়া ভেন্যুটি ছিল অবহেলার অন্যতম উদাহরণ। উন্নয়ন কাজ শুরুর কিছুদিন পরই পথচলতি মানুষ থমকে দাঁড়িয়ে যেতেন আউটার স্টেডিয়ামে সবুজ নান্দনিকতায়। কিন্তু গেল বছরের জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আউটার স্টেডিয়ামের চিত্রপটও বদলে যায়। একটি অংশের খামখেয়ালি আচরণের সঙ্গে সিজেকেএস’র উদাসীনতায় সবুজ গালিচা পরিণত হয় বালুর রাজত্বে।

 

সাধারণের প্রশ্ন, প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া প্রকল্প সঠিক পরিকল্পনার আওতায় কেন দ্রুত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলো না সিজেকেএস। এমন প্রশ্নের জবাবে সিজেকেএস’র একজন অফিস কর্মকর্তা জানান, আসলে সে সময় নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়েছিল সিজেকেএস। যার ফলে আউটার স্টেডিয়াম চলে যায় দৃষ্টির বাইরে। যা হওয়া উচিত ছিল না। জেলা প্রশাসক যিনি আবার পদাধিকার বলে সিজেকেএস সভাপতি, চাইছেন দ্রুততম সময়ে আউটার স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজ শুরু করতে। উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মাঠটিকে আবারও সবুজ গালিচায় রূপান্তর ও খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। সিজেকেএস’র কর্মকর্তা আরও জানান, দ্রুততম সময়েই এই কাজ শুরু হবে। তবে পূর্বের নকশা অনুসরণ করে ওয়াকওয়ে ও গ্যালারি থাকছে না। শুধু মাঠটিকে ঘাসের চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নির্দ্দিষ্ট সময় সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রেখে পরিকল্পিত ব্যবহারের আওতায় আনা হবে ভেন্যুটিকে। ভেন্যুটির সুরক্ষায় নিরাপত্তাকর্মী ও মাঠকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

 

প্রসঙ্গত, এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের নকশায় মাঠের চারপাশে ক্রিকেট প্র্যাকটিস নেট, ভলিবলসহ নানা খেলাধুলার জন্য ব্লক, সুইমিং পুলের দেওয়ালের দিকে নেট প্র্যাকটিস ব্লক, স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে ১৫০ থেকে ২০০ দর্শকের বসার জন্য গ্যালারি এবং সার্কিট হাউস প্রান্ত ও নুর আহমদ চৌধুরীর প্রান্তে ওয়াকওয়ে ছিল। এছাড়া বাকি জায়গায় টয়লেট সুবিধা, ড্রেসিংরুম এবং বসার জায়গা থাকার কথা। ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের মাঠের মধ্যে ৮ হাজার বর্গফুটে হওয়ার কথা ফুটবল খেলার মাঠ। যা বর্তমানে দৃশ্যমান।

 

চট্টগ্রামে খেলাধুলায় ভেন্যু সংকট প্রবল। ফুটবল বা ক্রিকেট, যে কোন ইভেন্টের বেলায় অনুশীলনের সুযোগ সুবিধা অপ্রতুল থাকায় অনেকেই নির্ভর করতেন কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামে। এই উন্মুক্ত ভেন্যুটিতে সকাল থেকে রাত অবধি খেলাধুলায় মেতে থাকতেন ক্রীড়া পাগল কিশোর-তরুণরা। বছর দুয়েক পূর্বে খেলাধুলার জন্য প্রায় পরিত্যক্ত এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)। সিজেকেএস’র নিজস্ব অর্থায়নে পরিকল্পিত উদ্যোগে খেলার মাঠটি ফিরে পেয়েছিল নান্দনিকতা। পতিত জমিতে পরিণত হওয়া আউটার স্টেডিয়ামটি রূপলাভ করে একখ- ‘সবুজ গালিচায়’। জেলা ক্রীড়া সংস্থাও পরিকল্পনা নিতে থাকে ভেন্যুটিকে খেলাধুলার পঞ্জিকাভুক্ত করতে। কিন্তু প্রশাসনের তদারকি কিংবা নজরদারি না থাকায় মাঠটি ফিরে যাচ্ছে সেই আগের অবস্থায়। গত কদিন ধরেই চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মাঠে সবুজ গালিচা উধাও হলেও রুক্ষ খটখটে পরিবেশ নেই, ফলে ধুলোবালির অত্যাচারও নেই। তবে শুকনো আবহাওয়ায় এই ভেন্যুতে খেলাধুলার পরিবেশ নেই বললেই চলে। গতকাল সোমবার বিকালে সরেজমিন আউটার স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা যায়, সবুজ গালিচা উধাও। মাঠের অধিকাংশ স্থানে নেই ঘাস। সেখানে দেখা মিলছে বালু আর বালু। কিছু কিছু স্থানে ঘাসের কিছু অস্তিত্ব মিললেও সেগুলো বিলীন হওয়ার পথে।

 

চট্টগ্রামে এক সময়ের খেলোয়াড় তৈরির কারখানা ছিল আউটার স্টেডিয়াম। এই মাঠেই নিয়মিত খেলতেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, তামিম ইকবাল, নান্নু থেকে শুরু করে নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদসহ আরও অনেকে। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গল দলও খেলেছে এ মাঠে। স্টার সামার, স্টার যুব টুর্নামেন্টের মত বড় বড় আয়োজন গড়িয়েছে এখানেই। গত তিন দশক ধরে দখলদারদের থাবায় এটি পরিণত হয় জঞ্জালে। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এটিকে পরিণত করা হয় ব্যবসায়িক জোনে। অথচ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক অর্জনের সাক্ষী এ মাঠ। মাঠটির যাবতীয় তদারকির দায়িত্ব চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার।

 

আরেকটি সংকট বা দুর্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সর্বশেষ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)’র সর্বশেষ ঘোষণায়। এরইমধ্যে সবার জানা, এনএসসি এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে ২৫ বছরের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে বাফুফে বরাবর। এ নিয়ে চট্টলার ক্রীড়াঙ্গনে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সিজেকেএস’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানালেন, এনএসসি থেকে আমরা এখনও অফিসিয়াল কোন চিঠি পাইনি। যে কারণে আমরা অবগত নই, বাফুফের অধিকারে গেলে তারা ভেন্যুটির ঠিক কোন কোন অংশ ব্যবহার করবে। সঙ্গত কারণেই আউটার স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজের গতিও স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। তবে তার মাধ্যমে জানা গেল জেলা প্রশাসকের সর্বশেষ উদ্যোগ আশান্বিত করবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াপাগলদের। দ্রুততম সময় বলতে গিয়ে এ কর্মকর্তা জানালেন, কয়েকদিনের মধ্যে মাঠকে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত করার কাজ পুনরায় শুরু হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট