অধিক লাভের আশায় লোভে পড়ে অনলাইনে ব্যবসার নামে প্রতারণার শিকার হয়ে দুই ব্যক্তি হারিয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখতে পায় যেসব ব্যাংক হিসাব, নগদ এবং বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছে সবগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে খোলা হয়েছে। যার কারণে প্রতারকদের শনাক্ত করা কোনভাবেই সম্ভবপর হচ্ছে না।
আলি আকবর (ছদ্মনাম)। বাড়ি কুড়িগ্রামের ভুরঙ্গামারী থানার পাইকের ছড়া গ্রামে। বসবাস করেন হাটহাজারীর ফতেপুর এলাকায়। আলি আকবর জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তার মুঠোফোনের টেলিগ্রামে সাদিয়া জাহান প্রভা নামে একটি আইডি হতে ‘সাদিয়া জাহান ১২’ নামে একটি লিংক পাঠায়। বলা হয় তাদের আইএমডিবি (ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ) নামে একটি কোম্পানি আছে। ওই কোম্পানিতে ‘রেটিং টাস্ক’ এর কাজ করতে বলা হয়। প্রথম দিন ‘রেটিং টাস্ক’ সাবমিট করার পর ৫০০ টাকা বিকাশে পাঠায় তারা। এতে তার লোভ বেড়ে যায়।
আলি আকবর জানান, পরবর্তীতে আর একটি ‘রেটিং টাস্ক’ নবায়ন করতে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠান তিনি। রেটিং সাবমিট করার পর বলা হয় আরো ২৩ হাজার টাকা রিচার্জ করলে ‘রেটিং টাস্ক’ করতে পারবে এবং কোম্পানি কমিশনের টাকাও বেশি দেবে। তাদের কথামতো আলি আকবর আরো ২৩ হাজার টাকা পাঠান। এর এক ঘণ্টা পর ইসলামী ব্যাংকের একটি হিসাবে আরো ৩৭ হাজার টাকা পাঠান। ৩৭ হাজার টাকা পাঠানোর পর ‘আইএমডিবির’ ওয়েব সাইটে তার আইডিতে দ্বিগুণ টাকা বোনাসের পয়েন্ট দেখতে পান।
এরপর তাকে তথাকথিত ওই কোম্পানির গ্রুপে এড করে আরো বেশি টাকা লাভের অপার দেয়া হয়। বলা হয় ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জমা দেয়া হলে দ্বিগুণ লাভ পাবে। তখন আরো এক লাখ টাকা জমা করেন আলি আকবর। কিছুক্ষণ ‘রেটিং টাস্ক’ সাবমিট করার পর বলা হয় কোম্পানি আলি আকবরের আইডিতে বোনাসের টাকা বেশি দিয়ে ফেলেছে। আরো এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা জমা করতে হবে। এক ঘণ্টা পর সব টাকা তুলে নিতে পারবে।
অতিরিক্ত লাভের আশায় ধাপে ধাপে ধার দেনা করে ১০ থেকে ১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব ও নগদ, বিকাশ নম্বরে গত ২ নভেম্বর থেকে ৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা পাঠান আলি আকবর। এক পর্যায়ে আইএমডিবি নামের ওই অনলাইন কোম্পানি আলি আকবরের আইডি বন্ধ করে দেয়। লাভের আশায় বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে পথে বসেছেন আলি আকবর। এতদিন নানাভাবে চেষ্টা করেও কোন কূলকিনারা করতে পারেননি। গত ১২ এপ্রিল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলেন তিনি।
একইভাবে ই-কমার্স ব্যবসার ফাঁদে পড়ে দুই দিনের ব্যবধানে ১৩ লাখ টাকা খুইয়েছেন একটি বেসরকারি এজেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা। ফরিদুল আলম (ছদ্মনাম) নামের এ ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর একটি বাংলা লিংক নম্বর থেকে তার মুঠোফোনের নম্বরে একটি এসএমএস আসে। যেখানে এক ব্যক্তি তাকে ই-কমার্স ব্যবসা করার জন্য প্রস্তাব দেয়। লোভনীয় অফার দেখে মুঠোফোনের ওই ব্যক্তির সাথে ই-কমার্স ব্যবসা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন ওই ব্যক্তি ‘বেস্টবাই-ওয়ার্কিং ডট কম’ নামে একটি ওয়েব সাইটের ঠিকানা দেন।
পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির কথামতো ওয়েবসাইটে নিজের একটি একাউন্ট তৈরি করেন ফরিদুল। বেশ কয়েকদিন কাজ করার পর তারা এক লাখ টাকা জমা দেয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বর দেন। ওই হিসাবে প্রথমে এক লাখ টাকা জমা করেন। একইভাবে দুই দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন ব্যাংকের দশটি হিসাব নম্বর ও নগর এবং বিকাশ নম্বরে মোট ১৩ লাখ টাকা জমা করেন ফরিদুল।
তিনি বলেন, ওই ব্যক্তির কথায় কিভাবে যে আমি টাকাগুলো দিলাম বুঝতেই পারিনি। বেশি লাভের লোভ আমার ভেতরে কাজ করেছে। এক পর্যায়ে বুঝতে পারলাম আমি প্রতারকের ফাঁদে পড়েছি। এজেন্ট ব্যাংকের এ কর্মকর্তাও জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান প্রতিকার পাবার আশায়।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পঞ্চল ও ডিবি) মো. রাসেল জানান, বেশি লাভের আশায় তারা প্রতারকের ফাঁদে পড়েছে। দুই ব্যক্তি পুরো বিষয়টি খুলে বলেছে। তারা যেসব ব্যাংকের হিসাব, বিকাশ ও নগদ নম্বরে টাকা পাঠিয়েছে সবগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভুয়া। অন্যজনের নাম দিয়ে এসব হিসাবের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। যাদের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে তারা জানেও না। যার কারণে আমরা তদন্ত করতে গিয়ে এক জায়গায় আটকে আছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল বলেন, সচেতনতার অভাবে এমনটি ঘটছে। প্রতারকের ফাঁদে পড়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে।
পূর্বকোণ/ইব