পহেলা জানুয়ারি থেকে চুক্তিভিত্তিক খামার বন্ধ, করপোরেট সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ ১০ দফা দাবিতে ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন খামারিদের একটি অংশ। এরমধ্যেই কয়েক দফায় ব্রয়লার মুরগির এক দিনের বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করার অভিযোগ করছেন খামারি ও ডিলাররা।
তাদের দাবি, আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনেক খামারি মুরগি ও ডিম উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। সেই সুযোগে মুরগির বাচ্চার ইচ্ছেমত দাম বৃদ্ধি করছেন হ্যাচারি মালিকরা। গেল তিন সপ্তাহে এক দিনের মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়েছে নাহার, প্রভিটা, কাজি, প্যারাগন, প্রগ্রেসিভসহ প্রথম সারির প্রায় সবক’টি হ্যাচারি।
খামারিদের দাবি, প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলীন করতে তাদের গলার কাটাখ্যাত ‘চুক্তিভিত্তিক খামার’র প্রসার প্রয়োজন। আর এই কারণেই মুরগির বাচ্চার দাম বৃদ্ধি করেছে হ্যাচারিগুলো।
খামারি ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জানুয়ারির শুরুতে একদিন বয়সী ব্রয়লার মুরগির প্রতিটা বাচ্চা বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। কিন্তু তিন সপ্তাহে কয়েক দফা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির একদিন বয়সী প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৭০ টাকায়। এতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করে যেসব খামারি মুরগি উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। এরমধ্যে দাম বাড়ছে প্রয়োজনীয় ওষুধেরও।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফটিকছড়ি এলাকায় মুরগির বাচ্চার ডিলার মো. ইদ্রীস বলেন, জানুয়ারির শুরুর দিকে প্রায় সবগুলো হ্যাচারিতে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে। এই কয়েকদিনের ব্যবধানে তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিলার পর্যায়ে এক দিনের প্রতিটি বাচ্চার দাম ৫ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে খামারিদের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। কারণ তারা দাম বেশি নিলেও মুরগির বাচ্চার প্যাকেটে খুচরা মূল্য লেখে না। মূলত খামারিদের ধ্বংস করার জন্য তারা এটা করছে।
অনেকটা একই কথা বলেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিটন প্রসাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এখন তো আন্দোলন চলছে। আমরা অনেকেই মুরগি ও ডিম উৎপাদন বন্ধ রেখেছি। কিন্তু তাতেও সরকারের কেউ কর্ণপাত করছে না। এটা হ্যাচারি মালিক তথা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। মুরগির বাচ্চার দাম আরও বৃদ্ধি করে প্রান্তিক খামারিদের পুরোপুরি ধ্বংস করার চেষ্টা করছে তারা।
তিনি বলেন, একদিনের একটা বাচ্চা যদি খামারিকে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয়। তাহলে খামারি খামারে রেখে খাবার খাইয়ে, ওষুধ ও ভ্যাক্সিন দিয়ে বড় করবে। সেখানে কয়েকগুণ খরচ আরও। তারপর পাইকারি দরে মুরগিগুলো বিক্রি করবে। সেখান থেকে আয় করার আর কোনো সুযোগ থাকে না।
দেশে মুরগির বাচ্চা ও ডিম উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সংগঠন ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)। প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। তবে হঠাৎ মুরগির বাচ্চার দাম বৃদ্ধির কারণ ‘অজানা’ বলে জানান কাজী ফার্মস লিমিটেডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম মুন্না।
পূর্বকোণ/ইব