চট্টগ্রাম বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাজারী গলির সব দোকান খুলবে কাল থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ৫:৫৯ অপরাহ্ণ

হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে নিয়ে ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তুলকালাম কাণ্ডের পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে নগরীর হাজারী গলির পরিস্থিতি। গতকাল বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে সেখানকার দোকান ও মার্কেটের সিলগালা করা তালা খুলে দেন। আগামীকাল শনিবার থেকে হাজারী গলির সব দোকান খোলা থাকবে বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার সময় সরেজমিনে দেখা যায়, টেরিবাজার বকশিরবিট এলাকার হাজারী গলির গেট তালা মারা। সেখানে কয়েকজন এপিবিএন সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। কেসি দে রোড ও কাটা পাহাড় সড়ক এলাকায় হাজারী গলির অপর দুটি গেটের পকেট গেট খোলা ছিল। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে বলা হলেও দুয়েকটি ছাড়া প্রায় সব দোকানই বন্ধ দেখা গেছে।
ইসকন নিয়ে ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন মিয়া শপিং সেন্টারের মোল্লা স্টোরের মালিক ওসমান মোল্লা। আলোচিত সেই দোকানের সামনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাহারা দিতে দেখা যায়। সব দোকান পুরোপুরি খোলা না হলেও গলির ভেতরে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি ছিল। হাজারী গলির পাশাপাশি কোতোয়ালী মোড়, আন্দরকিল্লা মোড় ও জামালখান এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়তি টহল দেখা গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সহ-সভাপতি জয় প্রকাশ দাশ জানান, গত বুধবার আমরা যৌথবাহিনীর সাথে বৈঠক করেছি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (বুধবার) ব্যবসায়ীদের দোকান খুলতে বলা হয়েছে। হাজারী গলিতে প্রায় ৭০০ ওষুধের দোকান রয়েছে। অধিকাংশ দোকানে পাইকারি ওষুধ বিক্রি করা হয়। ঘটনার পরপর নিরাপত্তার স্বার্থে দোকান ও মার্কেটে সিলগালা করে দিয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। উদ্যোগটি ভালো ছিল।
তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিলগালাগুলো বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ঘটনার পরপর অধিকাংশ দোকানদার ও কর্মচারী দোকান বন্ধ করে চলে গেছেন। বৃহস্পতিবার দোকান খুলতে বলা হলেও ব্যবসায়ীরা না থাকায় অধিকাংশ দোকান খোলা হয়নি। আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও দোকান বন্ধ থাকবে। শনিবার থেকে সব দোকান খোলা হবে।
এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, হাজারী গলির ঘটনায় বহিরাগত লোকজন অংশ নিয়েছে। থানায় দায়ের করা মামলায় কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী ও কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বেশকিছু ব্যবসায়ীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। কতজন ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। শনিবার দোকান খুললে প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। তবে ৩০-৩৫ জন্য ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনকে আমরা বলেছি প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমরাও চাই প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি হোক। তবে যারা ঘটনায় জড়িত নয় তাদেরকে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে আইনি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক প্রণব সাহা জানান, হাজারী গলিতে প্রায় ২৮০টি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকান খুলতে বলা হয়েছে। তবে অধিকাংশ দোকানদার ঘটনার পর থেকে এলাকা ছাড়া। আশা করছি শনিবার থেকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে হাজারী গলি।
যৌথবাহিনীর সাথে বৈঠক: হাজারী লেন ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতা আলী আজগর গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি, হাজারী লেন ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ জুয়েলারি এসোসিয়েশন ও স্বর্ণ শিল্প কারিগর সমিতি চট্টগ্রামের নেতাদের সাথে যৌথবাহিনীর বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা এবং নিরাপরাধ দোকান মালিক ও কর্মচারীদের মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
হাজারী গলির ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হাজারী লেন, টেরিবাজার ও কেসি দে রোড এলাকায় যৌথবাহিনীর টহল বাড়ানোর কথাও বলা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা ও নিরপরাধ ব্যবসায়ীদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তির বিষয়টি দেখার আশ^াস দিয়েছেন যৌথবাহিনীর কর্মকর্তারা।
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন হাজারী লেন ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি আলী আজগর, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলমগীর নূর, বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহ-সভাপতি জয় প্রকাশ দাশ, বাংলাদেশ জুয়েলারি এসোসিয়েশন (বাজুস) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি যিসু বণিক, সহ-সভাপতি শাহজাহান ছিদ্দিকী প্রমুখ।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট