চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

মামলা নিয়ে দুই থানার রশি টানাটানি

নাজিম মুহাম্মদ

৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাওয়া এক ট্রাক রসুন হাওয়া হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকভর্তি রসুনগুলো পরিকল্পিতভাবে লুট করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করে বন্দর থানায় একটি মামলার আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক হুমায়ুন কবির। পণ্য বোঝাইয়ের পর স্কেলে ওজন মাপতে ট্রাকটি সদরঘাটে নেয়া হয়েছিল।

 

হুমায়ুন বলেন, বন্দর থানার ওসি তাকে জানান, মামলা হবে সদর ঘাট থানায়। আর সদরঘাট থানা গেলে ওসি বলেন, মামলা হবে বন্দর থানায়। দুই থানার টানাটানিতে ঘটনার চারদিন পার হলেও কোন থানায় মামলা নিচ্ছে না। জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) প্রকৌশলী আবদুল মান্নান জানান, রসুনগুলো বন্দর থেকে ট্রাকে তোলা হলেও নগরী থেকে লুট হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী যেখান থেকে পণ্যগুলো লুট হয়েছে সেখানেই মামলা হবার কথা। ট্রান্সপোর্ট মালিকের দাবি, ট্রাক চালকের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত মুঠোফোনে যোগাযোগ ছিল। তারপর থেকে চালকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি জানেন না পণ্যগুলো কোন জায়গা থেকে লুট হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ঘটনাস্থল যে এলাকায় সেখানকার থানায় মামলা হবার কথা। তারপরও বিষয়টি

 

আমরা খতিয়ে দেখছি। বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ জানান, পণ্যভর্তি ট্রাকটি না পাবার পর থেকে দুই থানায় দৌড়াদৌড়ি করছে ট্রান্সপোর্ট মালিক। গত শনিবারও বন্দর থানার ওসির সাথে আমি কথা বলেছি। তিনি মামলা নেবেন বলেছেন কিন্তু নেননি। পণ্যগুলো নগরী থেকে লুট হয়নি প্রসঙ্গে জাফর আহমেদ বলেন, আমরা তো জানিনা পণ্যগুলো কোন জায়গা থেকে লুট হয়েছে। কিন্তু ট্রাকে তোলা হয়েছে বন্দর থেকে। অতীতে এ ধরনের ঘটনার অসংখ্যা মামলা নগরীর থানাগুলোতে হয়েছে। এখন বন্দর থানার ওসি ট্রান্সপোর্ট মালিক কেন মামলা করবে তার উল্টো জবাব চাইছেন। বাস্তবতা হচ্ছে পণ্য গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত ট্রান্সপোর্ট মালিকের দায়-দায়িত্ব থাকে।

 

রসুন পরিবহনকারী ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি আলিফ নিরাপদ ক্যারিয়ারের মালিক হুমায়ুন কবির জানান, সিলেটের জনৈক সবুজ নামে এক ব্যক্তি নগরীর এমএস ট্রেডিং থেকে ৭২৫ ব্যাগ রসুন কিনেন। যার ওজন ১৪ হাজার ৭৮০ কেজি। বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। রসুনগুলো সিলেটের কালিঘাটে নিতে গত ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে দশটায় বন্দরের ডি ইয়ার্ড থেকে একটি ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ট-১১-৬১৯৪) তোলা হয়। এরপর নগরীর সদরঘাটে স্কেলে ট্রাকটির ওজন মাপা হয়। ট্রাকের চালক ও হেলপার পণ্যের চালান বুঝে নিয়ে ২৯ অক্টোবর রাত পৌনে এগারোটায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যথাসময়ে রসুনভর্তি ট্রাকটি সিলেট না পৌঁছালে পরদিন (৩০ অক্টোবর) রাত সাড়ে আটটায় চালক শহীদুলকে ফোন করা হলে জানান, তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছে। গাড়ির চাকা সমস্যা হয়েছে এ কথা বলেই ফোনের লাইন কেটে দেয়।

 

এরপর থেকে চালকের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকভর্তি রসুনগুলো চালক, হেলপার মিলে পরিকল্পিতভাবে লুট করেছে। হুমায়ুন বলেন, ঘটনার পর বন্দর থানায় মামলা করতে গেলে তারা জানান, গাড়িটি যেহেতু স্কেলে ওজন মাপতে সদরঘাটে নেয়া হয়েছে, সুতরাং মামলা হবে সদরঘাটে। সদরঘাট থানায় গেলে বলা হয়, পণ্য যেহেতু বন্দর থেকে তোলা হয়েছে মামলা হবে বন্দর থানায়। দুই থানার ঠেলাঠেলিতে গত তিনদিন ধরে কোন থানায় মামলা নেয়নি। তাছাড়া ট্রান্সপোর্ট মালিক কেন মামলা করবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বন্দর থানার ওসি। মামলার আবেদনে চারজন আসামির নামও দেয়া হয়েছে। তারা হল- নাটোরের বনপাড়া গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মোহাম্মদ শহীদুল (৩২), তার ভাই মোহাম্মদ বাবু (২৮), নগরীর সদরঘাট থানার পশ্চিম মাদার বাড়ি এলাকার মোহাম্মদ সেলিম (৪৭) ও মো. রাসেল (২৭)। তাদের ছবিও আছে আমার কাছে। যত দেরি হবে ততই পণ্যগুলো না পাওয়ার আশংকা বেশি।

 

জানতে চাইলে বন্দর থানার ওসি কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান জানান, বন্দর এলাকা থেকে পণ্যগুলো ট্রাকে তোলার পর স্কেলে ওজন মাপতে ট্রাকটি সদরঘাট থানা এলাকায় গিয়েছিলো। এরপর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে এটি ছেড়ে যায়। আমরা রসুনের মালিককে আসতে বলেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট