গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে শীতের আগমনীতে টমেটো বাজারজাত করে বেশ সফল হয়েছিলেন নগরীর উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা। কিন্তু এবার আগাম টমেটো চাষ করেও বেশিরভাগ কৃষকের মাথায় হাত। ভাল বীজ না পাওয়ায় সময়মত ফলন আসেনি অধিকাংশ জমিতে। ফলে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন এখানকার কৃষকেরা। তবে এরমধ্যে হাতে গোনা দুয়েকজন কৃষক ৫ থেকে ৬ গুণ দাম দিয়ে উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করে টমেটো আবাদ করেছিলেন। আর আগাম টমেটো চাষ করে তারাই বাজিমাত করেছেন পুরো এলাকায়। গত পনের দিন ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি টমেটো বাজারজাতও করছেন তারা। বাজারে দাম বেশি থাকায় লাভও হচ্ছে বেশি।
টোল রোড ও আউটার রিং রোড নির্মাণের পর উপকূলে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠায় হারিয়ে যাওয়ার পথে এ এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি জমি। কংক্রিটের স্থাপনায় পুকুর নালা ভরাট হওয়ায় পর্যাপ্ত সেচের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। রয়েছে সার ও বীজ সংকট। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিভিন্ন মৌসুমে নগরীতে তাজা শাকসবজির সরবরাহ করে আসছেন এখানকার কৃষকরা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত এবার প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ চলছে। এদের মধ্যে রয়েছে কয়েক হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো চাষ।
গতকাল হালিশহর পতেঙ্গা ও কাট্টলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ টমেটোর জমিতে ফলন নেই। চারাগুলো অত্যাধিক বড় হয়ে ঝুঁকে পড়েছে। অনেক জমিতে প্রায় চারা নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতিবছর তারা থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত প্রফিট আর্লি নামের বীজ থেকে চারা তুলতেন। চাহিদা বেশি থাকায় এবার বাজারে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের এ বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। ১০ গ্রাম বীজের দাম ৫৫০ টাকা হলেও এবার বিক্রি করা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। দাম অত্যাধিক হওয়ায় কৃষকরা বাজার থেকে অন্য বীজ সংগ্রহ করে টমেটো চাষ করেছিলেন। কিন্তু এদের কারো জমিতে ঠিকমত ফলন আসেনি।
স্থানীয় বাতেন, জয়নাল, বাহার, মুনাফসহ বেশিরভাগ কৃষক এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। প্রতি কানি জমিতে ফলন আসার আগ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছেন কৃষকরা। এসব জমিতে কিছু ফলন আসলেও তা বাজারজাত করতে আরও সময় লাগবে। তখন বাজারে টমেটোর দামও কমে যাবে। ফলে খরচের টাকাও উঠবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান এসব কৃষকরা।
কৃষক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এখানে আমরা চাষাবাদ করছি। পর্যাপ্ত পানি নেই। মজুরির টাকাও বেড়েছে কয়েকগুণ। এরমধ্যে এবার আগাম টমেটো রোপণ করতে গিয়ে ভাল বীজ পায়নি বেশিরভাগ কৃষক। স্থানীয়ভাবে যারা বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করেছেন তাদের জমিতে ফলন ঠিকমত আসেনি।’
তবে এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হালিশহর আনন্দবাজার এলাকার কৃষক মো. মহসিন। প্রায় ছয়গুণ দাম দিয়ে বীজ সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। গতকাল তার কৃষি জমিতে দেখা গেছে, টমেটোর জমিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। গত ১৫ দিন ধরে টমেটো বাজারজাত করছেন তিনি। বাজারে টমেটোর দাম এখনও বেশ চড়া আর ফলন ভাল হওয়ায় বেশ খুশি তিনি। প্রায় দশকানি জমি থেকে প্রতিদিন গড়ে একহাজার কেজির বেশি টমেটো বাজারে দিচ্ছেন তিনি।
মহসিন ছাড়াও জামাল উদ্দিন, জয়নাল, ইলিয়াছসহ উপকূলের বেশ কয়েকজন কৃষকের আগাম টমেটো বাজারে আসছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে উপকূলের এসব তাজা টমেটো। এখানে প্রতি কেজি টমেটো জমি থেকেই পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়, যা বাজারে ১০০ টাকারও বেশি।
বীজ সংকটের কথা স্বীকার করে পতেঙ্গা মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার খবীর উদ্দিন বলেন, ‘চাহিদা বেশি থাকায় আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের এই বীজটিতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং চড়ামূল্যে বাজারে বিক্রি করেছে। ফলে অনেক কৃষক এই বীজ সংগ্রহ করতে পারেনি, ঠিকমত ফলনও আসেনি।’
পূর্বকোণ/আরডি