চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিপিসি’র চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন

বারবার প্রকল্প সংশোধন লাগছে দ্বিগুণ সময়

রুট নির্ধারণ নিয়ে আপত্তি, ভূমি জটিলতা, করোনায় কাজে ধীরগতি

মিজানুর রহমান

২০ জুলাই, ২০২২ | ৩:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে সরাসরি জ্বালানি তেল পরিবহনে পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৮ এর ৯ অক্টোবর। সেই সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ এর ১ অক্টোবর থেকে ২০২০ এর ৩১ ডিসেম্বর। তবে বারবার ডিপিপি সংশোধন করায় নির্দিষ্ট সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিপিসি। ২ বছরের প্রকল্পটি শেষ করতে এখন সময় লাগছে ৪ বছর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রুট নির্ধারণ নিয়ে অংশীজনদের আপত্তি, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, ট্যাংকলরি ও জাহাজ মালিকদের বিরোধিতায় নির্দিষ্ট সময়ে পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। ডিপিপি সংশোধন করতে হয়েছে। এরপর করোনার ধাক্কায় কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। তবে এখন কাজে গতি ফিরেছে। প্রকল্পের অর্ধেকেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকিটুকু শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সরাসরি জ্বালানি তেল পরিবহনে ১৯৯৯ সালে পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ১৬ বছর পর ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাইপলাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে বিপিসি। ২০১৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ এর ২৯ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ডিপিপি জমা পড়ে। তখন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৩৩১ কোটি টাকা।
তবে অংশীজনদের চাপে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে জমা হওয়া ডিপিপিতে পরিবর্তন আনা হয়। খরচও বাড়ানো হয় ৫৩০ কোটি টাকা। এরপর ২০১৮ এর ৯ অক্টোবর ২৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর রুট নির্ধারণ নিয়ে ফের জটিলতা দেখা দেয়। অংশীজনদের চাপে নতুন করে ডিপিপি সংশোধন করে বিপিসি। ফলে প্রকল্পের কাজে বিঘœ ঘটে। কয়েক দফায় ডিপিপি সংশোধন করে এখন এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩১৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের নতুন মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার পাইপলাইন। ভূগর্ভে স্থাপন করা এসব পাইপলাইনের ব্যাস থাকবে ১৬ ইঞ্চি।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের গোদানাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পাইপলাইন। তবে এসব পাইপলাইনের ব্যস ১৬ ইঞ্চির পরিবর্তে ১০ ইঞ্চি থাকবে। পতেঙ্গা থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন যাবে ২২টি নদীর তলদেশ ছুঁয়ে। পুরো পাইপলাইনজুড়ে থাকবে ৯টি স্টেশন। আর কুমিল্লার বরুড়ায় স্থাপন হবে নতুন করে একটি ডিপো।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল হক পূর্বকোণকে বলেন, নানা জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ। এটি বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের জ্বালানি তেল পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তেল পরিবহন দ্রুত হবে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে নৌ এবং সড়ক পথেই জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ পরিবহন খরচের পাশাপাশি তেলও চুরি হয়। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্যতা সঙ্কট তৈরি হওয়ার কারণে জ্বালানি তেল পরিবহনে সমস্যা দেখা দেয়। চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে জ্বালানি তেল সরবরাহে বিঘœ ঘটে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব ক্ষতি থেকে বাঁচবে বিপিসি। বছরে ২৭-৩০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পরিবহন করা সম্ভব হবে। যা পর্যায়ক্রমে ৫০ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সুরক্ষিত জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট