চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

পোশাকশিল্পে নীতিগত সহায়তা চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২:১০ অপরাহ্ণ

বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতি, বিভিন্ন দেশের চলমান যুদ্ধ এবং এর কারণে চলমান অস্থিরতার মধ্যে দেশের অর্থনীতি ধরে রাখতে হলে রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখার বিকল্প নেই। আর রপ্তানি বাণিজ্য বলতে প্রধানতম পণ্য পোশাক খাতকেই বোঝায়। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে হবে। আর এর জন্য চাই নীতিগত সহায়তা।

 

আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ প্রসঙ্গে পূর্বকোণ প্রতিনিধির সাথে ‘বাজেট ভাবনা’ নিয়ে আলোচনায় তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আসন্ন বাজেটে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা আমরা পাঠিয়েছি। এর মধ্যে আয়কর সংক্রান্ত চারটি, ভ্যাট সংক্রান্ত তিনটি এবং শুল্ক সংক্রান্ত দশটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আয়কর সংক্রান্ত চারটি প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১% থেকে কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৫০% নির্ধারণ করা এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখা। পোশাক শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নগদ সহায়তার উপর আয়কর কর্তনের হার ১০% থেকে কমিয়ে ৫% নির্ধারণ করা। তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে অন্যান্য আয় এবং বিবিধ খরচকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করে স্বাভাবিক হারে ৩০% কর আরোপ না করে কর্পোরেট ট্যাক্স হার ১২% হারে কর আরোপ করা। তৈরি পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টের ক্ষেত্রে আয়কর আইন-২০২৩ এর আওতায় সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তির মূল্য পরিশোধের সময় প্রস্তাবিত ধাপ অনুযায়ী উৎসে কর ধার্য করা। ওই কর’কে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা। অন্যথায় এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে কর্পোরেট ট্যাক্স হার ১২% হারে কর ধার্য করা। রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকদের ইআরকিউ ফান্ড থেকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি হতে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০% থেকে কমিয়ে ১০% করা।

 

ভ্যাট সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- রপ্তানিকে প্রতিযোগী করে তোলার জন্য স্থানীয় বাজার হতে সংগৃহীত পণ্য ও সেবাসমূহ এবং কিছু জরুরি সেবা যেমন- ছাপাখানা (প্রিন্টিং), কুরিয়ার বা এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস, অডিট এন্ড একাউন্টিং ফার্ম, ফেয়ার ট্রেড, জিওটিএ, বিসিআই ইন্সপেকশন/সার্টিফিকেশন ফি, আর্কিটেক্ট ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বা ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, কনসালটেন্সি চার্জ (দেশি ও বিদেশি), কমপ্লায়েন্ট অডিট/ইভালুয়েশন অডিট/ইথিক্যাল অডিট চার্জ, প্রশিক্ষণ ফি, আইন পরামর্শক চার্জ, রপ্তানি কাজে নিয়োজিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ মেরামত ব্যয় (জেনারেটর, বয়লার, স্টানটার মেশিন, ড্রাইং মেশিন, সুতা উৎপাদনকারী মেশিন ইত্যাদি), সিএসআর সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ, ভবন নির্মাণ ব্যয়, রপ্তানির কাজে নিয়োজিত জেনারেটরের জ¦ালানি ব্যায় ইত্যাদিকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা আবশ্যক। স্থানীয় শিল্পের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কটন ওয়েস্টসহ সকল প্রকার গার্মেন্টস ওয়েস্ট যা রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদনকারী মিলগুলোর কাঁচামাল ঝুট আমদানিতে সঠিক শ্রেণিবিন্যাস ও শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং কারখানা স্থাপনে মেশিনারিজ আমদানিতে অর্থায়ন ও শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা। কাটা পোশাক আমদানিতে সঠিক শ্রেণিবিন্যাস ও সংযুক্ত তালিকায় উল্লিখিত পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা। স্থানীয়ভাবে রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদনকারী মিলে ব্যবহৃত কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫% এবং পরবর্তীতে উৎপাদিত রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদন মিল কর্তৃক স্থানীয় স্পিনিং মিলে তা সরবরাহের উপর ধার্যকৃত ১৫% ভ্যাট মওকুফ করা। তৈরি পোশাক শিল্পের পোশাক প্রস্তুতপূর্বক রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে শেষ করতে সাব-কন্ট্রাক্টের বিপরীতে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট হতে পূর্বানুমোদন গ্রহণের শর্তটি সংশোধন করে পূর্বের ন্যায় বিজিএমইএ হতে জারিকৃত ইন্টারবন্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে সাব-কন্ট্রাক্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা।

 

শুল্ক সংক্রান্ত ১০টি প্রস্তাবনার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ সাব-কন্ট্রাক্ট কার্যক্রমে ভিন্ন ভিন্ন কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রে অবস্থিত হলে বন্ড কমিশনারেট থেকে পূর্বানুমোদন গ্রহণের শর্ত সংশোধন করে পূর্বের ন্যায় বিজিএমইএ হতে জারিকৃত ইন্টারবন্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে সাব-কন্ট্রাক্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা। কাঁচামাল আমদানিতে এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা। বন্ড লাইসেন্সিং জটিলতা কমানো। ওভেন কাপড় খালাসকালে কেজির পাশাপাশি মিটার/গজ উল্লেখের অপশন চালু করা। মেশিনারি, প্ল্যান্ট, যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ খালাস সহজ করা। বন্ডেড প্রতিষ্ঠান হতে অন্য বন্ডেড প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সহজ করা। তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫ পিস ডামি বিনাশুল্কে আমদানির অনুমোদন প্রদান করা। কারখানাকে আধুনিক, নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব এবং পরিচালনা ব্যয় সাশ্রয় করতে আরও কিছু যন্ত্রপাতি ও উপকরণ শুল্কমুক্ত/রেয়াতি হারে আমদানির জন এসআরও জারি করা ইত্যাদি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট