চট্টগ্রাম শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

গরমে ৫ সমস্যায় ভুগছে শিশুরা

ইমাম হোসাইন রাজু

২৮ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চলমান তীব্র দাবদাহের এ সময়ে অন্যান্য বয়সীদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা। এরমধ্যে শরীরের নানান জটিলতা নিয়ে হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে যেসব শিশু শরণাপন্ন হচ্ছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু পাঁচটি স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছে। শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে। তাই এ সময়ে শিশুদের প্রতি বাড়তি যতœ নেওয়ার পরামর্শ শিশু বিশেজ্ঞদের।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও আগ্রাবাদ মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালসহ শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য সময়ে তুলনায় গেল সপ্তাহখানেক ধরে হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের চেম্বারে ভিড় বেড়েছে শিশু রোগীর। এরমধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব, শরীরে হালকা জ¦র, খাবারে অরুচি, পানিশূন্যতা, প্রস্রাব কমে যাওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে। তবে সিংহভাগ শিশুরমধ্যে পাঁচটি সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিশু চিকিৎসকরা।

এরমধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, শরীরে হালকা জ্বর, বমি বমি ভাব, প্রস্রাব কমে যাওয়া এবং খাবারের অরুচি- এ চার স্বাস্থ্য সমস্যা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে কারণেই এই সময়ে শিশুদের এমন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যা শিশু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিও। এ নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

এর আগে গেল বুধবার অতি গরমে শিশুদের হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার মতো স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা-ইউনিসেফ। পাশাপাশি তিনটি পরামর্শও দিয়েছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি।

 

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে ব্যক্তিগত চেম্বারে যেসব শিশুরা আসছে, তাদের মধ্যে চারটি স্বাস্থ্য সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে খুব বেশি। এরমধ্যে শিশুদের খাওয়ার অরুচি, গায়ে জ্বর থাকা, বমি বমি ভাব এবং প্রস্রাব কমে যাওয়ার সমস্যা সংক্রান্ত বেশি শিশু পাওয়া যাচ্ছে।

 

চমেকের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, পানিশূন্যতার মতো কিছু শিশু রোগী মিলছে। অতিরিক্ত গরমের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে ধারণা।’

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বাসনা রানী মুহুরী বলেন, ‘দেশজুড়ে দুঃসহ তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। বর্তমানে গরমে শিশুদের মধ্যে নানান সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে শারীরিক দুর্বলতা, পানিশূন্যতা, খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব হওয়া, মাথা ঘোরানোর মতো ঘটনাগুলো হচ্ছে বেশি। আবার শরীর ঘেমে ঠান্ডাও লেগে যাচ্ছে। অল্পতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা।’

 

শিশুরা থাকে বাসায়, তবুও কেন সমস্যা বেশি তাদের : শিশুরা বাসা বাড়িতে থাকার পরও কেন এসময়ে শিশুদের এমন স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে, এর কারণ কী? এমন বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, শিশুদের সমস্যাগুলোর কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে যেটি পাওয়া যাচ্ছে, তাহলো শহরের বাসাগুলো হচ্ছে আবদ্ধ। আলো-বাতাসের চলাচল কম। বাচ্চারা বাসাবন্দী। তারমধ্যে তীব্র গরম। যার কারণে বাসা-বাড়ির ভেতরেও গরমে কাহিল হয়ে পড়ে শিশুরা। এ কারণে শিশুদের পানিশূন্যতা বেশি হচ্ছে। তারা স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ছে।’

 

অধ্যাপক ডা. বাসনা রানী মুহুরী বলেন, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যোজাত ও অল্পবয়সী শিশুদের জন্য। তারা যেখানে থাকুক না কেন। শহরে বাসা-বাড়িতে আলোবাতাস কম। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাসাগুলোও গরম হয়ে থাকে । যার কারণে শিশুদের উপর তার প্রভাব পড়ে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। এ কারণে অসুস্থও হয় বেশি।’

 

শিশুদের জন্য যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা : অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিশুরা ঘরের বাইরে যেতে বা খেলাধুলা করতে পছন্দ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে এটা সবার আগে মনে রাখা প্রয়োজন, গরমের সময় শিশুদেরকে নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়ালে তাদের খুব সহজেই হিটস্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- অবশ্যই শিশুর বসা ও খেলার জন্য ঠাণ্ডা জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী এমন পোশাক পরাতে হবে। এই মুহূর্তে রোদে যেন না যায়, সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে। বাহিরে ঘুরা বাদ দিয়ে এ সময়ে বাসায় “শিশুদের জন্য ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা” করা যেতে পারে।’

 

মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেন, ‘বাসায় থাকলেও এ পরিস্থিতিতে শিশুদের বেশি করে পানি পান করতে হবে। শিশুরা যেন ঘেমে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বারবার শরীর মুছে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে দিনে দু’বার গোসল করাতে পারেন। পানিশূন্যতা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে বারবার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।’

 

অধ্যাপক ডা. বাসনরা রানী মুহুরী বলেন, ‘ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখা উচিৎ। প্রাপ্তবয়স্ক শিশুদেরকেও রোদ থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা প্রয়োজন। এসময় বাহিরে যাওয়া বাদ দিতে হবে। এছাড়া শারীরিক কোন জটিলতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট