চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

চলাচল অনুপযোগী ইকোপার্ক সড়ক

নিজস্ব সংবাদদাতা

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৯:১২ অপরাহ্ণ

ভেঙ্গে খণ্ড খণ্ড হয়ে পড়ায় অনেকটা বিধ্বস্ত বাঁশখালী ইকোপার্ক সড়কটি। যাতায়াতের দুর্ভোগের কারণে পর্যটকরা এই ইকোপার্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম জানান, চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে অতি পরিচিত বাঁশখালী ইকোপার্ক। এটিতে ২০০৫ সাল থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। কিন্তু ইকোপার্কের বিধ্বস্ত সড়কটির কারণে কয়েক বছরের ব্যবধানে পর্যটকদের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। এর মধ্যে সড়কটি খণ্ড খণ্ড ভেঙ্গে যাওয়ায় ২০১৯ সালে এটি সংস্কার করা হলেও বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে।

 

বাঁশখালী ইকোপার্ক সড়ক ব্যবহার করে পাহাড়ে আসা-যাওয়া করে কৃষক আবু ছৈয়দ। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, এ সড়কটি ব্যবহার করে অনেক পর্যটক আসা-যাওয়া করত। এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। গত চার বছর ধরে সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না।

 

বাঁশখালীর শীলকূপ ও জলদী সীমান্তে পাহাড়ি এলাকায় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে উঁচু-নিচু পাহাড়, লেকের স্বচ্ছ পানি ও বনাঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠেছে ইকোপার্ক। তৎকালীন বিএনপি সরকার আমলে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে ২০০৩-২০০৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা হয়। ইকোপার্কে ঝুলন্ত ব্রিজ, পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার, দুটি টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময়ে শীলকূপ মনছুরিয়া বাজার থেকে ইকোপার্ক পর্যন্ত পৌনে ৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়। সড়কটি সংস্কারের পর থেকে ইকোপার্কটির প্রতিটি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়তে থাকে। কিন্তু সড়কটির নিয়মিত সংস্কার না থাকায় ক্রমগত আকর্ষণ হারাতে বসে পার্কটি।

 

বন বিভাগ সূত্র জানায়, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্যপ্রাণীর আবাস্থল উন্নয়ন, ইকো ট্যুরিজম ও চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে প্রায় এক হাজার হেক্টর বনভূমি নিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে সরকারি উদ্যোগে বাঁশখালী ইকোপার্ক তৈরি করা হয়।

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ইকোপার্কের ৬৭৪ হেক্টর বনভূমিতে ঝাউ বাগান, ভেষজ উদ্ভিদের বন ও অর্নামেন্টাল গাছসহ প্রায় ৩১০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। পার্কের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে পিকনিক স্পট, দ্বিতল রেস্ট হাউজ, হিলটপ কটেজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ, ওয়াচ টাওয়ার এবং মিনি চিডিয়াখানা। পার্কের দুইটি সুবিশাল লেকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ২০১১ সালের ২১ আগস্ট ইকোপার্কে গড়ে তোলা হয়েছে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের তথ্যসম্বলিত একটি তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র ।

 

বাঁশখালী ইর্কোপার্ক রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান শেখ জানান, বামের ও ডানের ছড়াখ্যাত ইকোপার্কটি ১৯৮৩-৮৪ সালে সেচ ব্যবস্থার জন্য গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য ইকোপার্ক হিসেবে সরকার নামকরণ করেন। রাস্তার অবস্থার কারণে বর্তমানে পর্যটক হ্রাস পেয়েছে। এক সময় বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা ছিল। এখানে নাটক, সিনামার শুটিং হয়েছে। ইকোপার্কে রয়েছে মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, চিত্রা বিড়াল, মেছো বাঘ ও নানা প্রজাতির পাখি। শীতকালে অতিথি পাখির কলরবে সরব হয়ে উঠে এই ইকোপার্কের সবুজ প্রকৃতি। ইকোপার্কের সুউচ্চ পাহাড়ে টাওয়ারে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের অথৈ জলরাশি, পাহাড়ের কোলঘেঁষে বয়ে চলা ঝর্ণাধারা আর বিকাল বেলায় সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

 

উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহামুদ বলেন, ‘ইকোপার্ক সড়কটি সংস্কারের জন্য আগামী কিছুদিনের মধ্যে টেন্ডারের আহ্বান করা হবে।’

 

 

র্পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট