চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

সালিশী বিচার নিয়ে কোন্দল

দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বাঁশখালীতে আহত ৩২

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী

২৬ জুন, ২০১৯ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলায় পশ্চিম বাহারছড়া দরগা পাড়ায় ১ মাদ্রাসা ছাত্রের সালিশী বিচারকে কেন্দ্র করে সামাজিক কোন্দল হিসাবে সোমবার (২৪ জুন) সকাল ১১টার দিকে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৯ জনকে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও অন্যদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আঘাত গুরুতর হওয়ায় বাঁশখালী হাসপাতাল থেকে ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। এলাকার পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে। যেকোন মুহূর্তে আবারো দু’পক্ষ মুখোমুখি হয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের দরগা পাড়া এলাকায় জেবের হোসেনের মাদ্রাসা পড়–য়া ছেলে নাঈমের সাথে ২ দিন পূর্বে পথে মধ্যে একই এলাকার লেদা বাসির ছেলে সোহেলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসা ছাত্র নাঈম আহত হওয়ায় লেদা বাসিকে সালিশী বিচার দেন। এই সালিশী বিচারকে কেন্দ্র করে সামাজিকভাবে কোন্দলে রূপ নেয়। এলাকার বনির সমাজ, দরখার সমাজ, দেওয়ানজী সমাজের নেতারা একত্রিত হয়ে ২৪ জুন ১১টার দিকে পেয়ারজানী বাপের সমাজের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষকালীন সময়ে দু’পক্ষ দেশীয় তৈরি দা, কিরিচ, লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দু’ ঘণ্টা ব্যাপী সংঘর্ষে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির (আই.সি) পরিদর্শক রফিকুল হাসান একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে বাঁশখালী থানার অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন, আব্দু ছবুরের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম (৩৪), গোলাম রহমানের ছেলে আবু সৈয়দ (৪৫), আবদুল লতিফের ছেলে মোহাম্মদ করিম (৩০), রাজা মিয়ার ছেলে আবদু ছবুর (৪৮), সিরাজ মিয়ার ছেলে নেজাম উদ্দীন (৩৫), মোক্তার আহমদের ছেলে আব্দু রহিম (৫২), মুন্সি মিয়ার স্ত্রী মোরর্শেদা বেগম (৩২), রাজা মিয়ার ছেলে আবদুল মোতালেব (৫৪), মরহুম আখতার কামালের ছেলে মোহাম্মদ সাবের (৫৩), মোহাম্মদ নাছিরের ছেলে তামিম (১৮), মরহুম বদি আহমদের ছেলে নাছির (৫০), মরহুম নাগু মিয়ার ছেলে মাকসুদুল আলম (৩৫), আখতার কামালের ছেলে জাকির হোসেন (৪০), জেবের হোসেনের মেয়ে সায়েমা আক্তার (১২), দুদু মিয়ার ছেলে জেবল হোসেন (৫০), সিরাজ মিয়ার ছেলে আজগর আলী (৪২), চাঁন মিয়ার ছেলে আবু বক্কর (৩৫), মরহুম বাঁচা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ (৫০), মৃত আবদুল লতিফের ছেলে আমিনুল হক (৩৫) ও রবিউল আলম (৩৭)।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বাহারছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বাহারছড়া গ্রামে ১ নং ও ২ নং ওয়ার্ডের লোকজন পাশাপাশি অবস্থান রয়েছে। পেয়ারজানী বাপের সমাজে নেতৃত্বদানকারী একপক্ষ হলেন মোহাম্মদ এনাম, মোহাম্মদ আনছার, মোহাম্মদ হারুন। তিন সমাজ নিয়ে অপরপক্ষ হলেন বনির বাপের সমাজে নেতৃত্বদানকারী হলেন আবুল কাসেম, দরখা সমাজের মর্তুজ আলী, দেওয়ানজী সমাজের নেজাম ও গিয়াস উদ্দিন। পূর্বপুরুষ থেকেই এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক কোন্দল ছিল। সেই কোন্দল উঠতি বয়সে যুবকদের মধ্যেও এখন আবার মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। সমাজের নেতৃত্ব দেয়া নিয়ে সংঘর্ষের মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে এলাকাবাসী।
বাঁশখালী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মুনিরা ইয়াছমিন বলেন, আহত রোগীদের মধ্যে ১৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজিক কোন্দলে রূপ নেয়। পরে মারামারির ঘটনাটি ঘটে।
বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ছোট ছেলেদের মারামারি থেকে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট