চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

প্রণোদনায় আয়কর ৩% নির্ধারণের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ মে, ২০২৪ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

পণ্য রপ্তানির বিপরীতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা বা প্রণোদনায় ১০% হারে যে আয়কর কেটে নেওয়া হয়, সেটি কমিয়ে ৩% নির্ধারণের প্রস্তাব জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ও ফোরএইচ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাওহার সিরাজ জামিল। তিনি বলেন, প্রতিযোগী দেশের সাথে পোশাক শিল্পের রপ্তানি বাণিজ্যের সক্ষমতা বজায় রাখতে সরকার প্রণোদনা দেয়। এই প্রণোদনার বিপরীতে পাওয়া নগদ অর্থের উপর আয়কর কর্তন করা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এটি সরকারি সহায়তা। কোন লভ্যাংশ নয়। তাই তৈরি পোশাক খাতের প্রণোদনার উপর আয়কর কর্তনের হার ১০% থেকে কমিয়ে ৩% করার প্রতাশা রাখি।

 

পূর্বকোণ প্রতিনিধির সঙ্গে আসন্ন বাজেটে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনাকালে গাওহার সিরাজ জামিল এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, এর আগে ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত তিন অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে নগদ সহায়তার বরাদ্দ ছিলো ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে বর্তমান বাজেটে (২০২৩-২৪) নির্ধারিত রপ্তানির বিপরীতে বরাদ্দকৃত নগদ সহায়তার তহবিল অপ্রতুল। তাই বর্তমানে তৈরি পোশাকের রপ্তানির পরিমাণের সাথে সমন্বিত হারে প্রস্তাবিত বাজেটে নগদ সহায়তার তহবিল বরাদ্দ করার প্রস্তাব করছি।

 

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পবান্ধব বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিট শিল্প সংশ্লিষ্ট আয়কর সংক্রান্ত ৭টি, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত ৩টি প্রস্তাবনা এবং কাষ্টমস সংক্রান্ত ৩টি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

 

এরমধ্যে রয়েছে, সোর্সে কর্তনকৃত অগ্রিম আয়কর থেকে রিটার্ন দাখিলের পর নির্ধারিত কর পরিশোধ শেষে ফেরত বা সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ, অথবা কর্তনকৃত অগ্রিম করকেই ওই কোম্পানির চূড়ান্ত কর আদায় হিসাবে গণ্য করা। এছাড়া শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য উৎস আয়করকে চূড়ান্ত উৎস করদায় হিসাবে আগামী পাঁচ অর্থবছরের (২০২৪-২৫ থেকে ২০২৮-২৯) জন্য শুন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা।

 

বন্দর থেকে পণ্য খালাসের বিষয়ে গাওহার সিরাজ জামিল বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে অগ্রহণযোগ্য খরচ ও অন্যান্য আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স হার প্রয়োগ করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া, ব্যাংকে এফডিআরে লভ্যাংশের উৎস থেকে ১২ শতাংশ কর আদায় করে তা চূড়ান্ত কর আদায় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।

 

তিনি আরো বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। ওই সময় তৈরি পোশাক খাত বাণিজ্যিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হবে। এ অবস্থায় তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগী সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ন্যায় শিল্প স্থাপন ও শিল্প উৎপাদন খাতকে উৎসাহ প্রদান করার লক্ষে সুদবিহীন বিশেষ ভর্তুকি বরাদ্দ প্রয়োজন।

 

ভ্যাট সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় গাওহার সিরাজ জামিল বলেন, শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠাসমূহকে শূন্য ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বাধ্য-বাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি শিল্পের রপ্তানি ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালার অধীন ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র খোলার জন্য রপ্তানিকারক ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকের বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বা স্পেশাল বন্ডেড ওয়্যার হাউজ থাকার বাধ্যবাধকতা বাতিল করে সংশ্লিষ্ট বিধি সংশোধন প্রয়োজন।

 

কাষ্টমস সংক্রান্ত তিন প্রস্তাবনায় গাওহার সিরাজ জামিল বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে ও গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহারের উপর চাপ কমানোতে কারখানার মালিকরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে সোলার প্যানেল, ১৬ কিলোওয়াট/ঘণ্টার বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ইনভার্টারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে সকল প্রকার কর ও শুল্ক অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করছি।

 

পরিবেশ দূষণ রোধে গার্মেন্টস মালিকরা কারখানায় ব্যবহৃত বর্জ্য ও পানিকে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের (ডব্লিউটিপি) মাধ্যমে পরিশোধন করে তারপর তা নিঃসরণ করছে। এমনকি পানি পরিশোধনের যাবতীয় কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। তাই ইটিপি এবং ডব্লিউটিপিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে ১ শতাংশ হারে শুল্কের বিপরীতে আমদানির সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি। এছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে বিভাগীয় ভ্যাট অফিস থেকে যে প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার বিধান রয়েছে তা বাতিলের অনুরোধ জানাচ্ছি।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট