চট্টগ্রাম রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

৫ দিনে দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ

প্রতিদিনই বাড়ছে ডিমের দাম

আরাফাত বিন হাসান

৭ মে, ২০২৪ | ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদের পর ডিমের দাম কিছুটা কমলেও গেলো প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকাল সোমবার নগরের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে ১১ টাকা পিস এবং খুচরায় সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করা আমিষজাত পণ্যটি। পাঁচদিন আগেও বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে ৯ টাকা ও খুচরা বাজারে সাড়ে নয় থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে গেলো পাঁচদিনে প্রতি পিস ডিমের দাম বেড়েছে ২ টাকা বা ২২ দশমিক ২২ শতাংশ।

 

দেশি বাজারে কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস কিংবা যেকোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য প্রতিদিন পরিবর্তন না হলেও ব্যতিক্রম ডিম। উৎপাদন খরচে তারতম্য না থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিনই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় পণ্যটির। ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের কথা বললেও খামারিরা বলছেন ভিন্ন কথা। খামারিদের দাবি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কারসাজির কারণেই বাড়ছে ডিমের দাম। তাদের ধারণা এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েকমাসে আরও বাড়তে পারে দাম।

 

তবে পোল্ট্রি শিল্পের তদারক প্রতিষ্ঠান প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন ডিমের দাম পরিবর্তন ও সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধির পেছনে দায়ী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই। প্রতিদিন সকালে নিলামের মাধ্যমে ডিম বিক্রি হয় এসব প্রতিষ্ঠানে। আর নিলামের দরটাই ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারাদেশে। এতেই প্রতিদিন পরিবর্তন ঘটে ডিমের দামে। তবে আমিষজাত পণ্যটির দামে স্থিতিশীলতা আনতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, নিজেরাই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দাপটের কাছে অসহায়।

 

বাজার পর্যালোচনা ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের তথ্যে জানা যায়, গেলো বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে প্রতি ১শ পিস মুরগির ডিমের পাইকারি দাম ছিল ৯০০ টাকা। পরদিন ৭০ টাকা বেড়ে তা দাঁড়ায় ৯৭০ টাকায়। শনিবার আরও ৬০ টাকা বাড়ে ডিমের দাম। ওইদিন নগরে প্রতি ১শ পিস মুরগি বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৩০ টাকায়। পরদিন রবিবার দাম বাড়ে আরও ৩০ টাকা। সর্বশেষ গতকাল আরও ৪০ টাকা বেড়ে পাইকারিতে ১১শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে প্রতি ১শ পিস ডিম।

 

ডিমের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি রিটন প্রসাদ চৌধুরী বলেন, প্রতিপিস ডিমের উৎপাদন খরচই ১০ টাকা। দাম বাড়লে খামারিরা কিছু পয়সা পাবে। ডিমের সরকার নির্ধারিত দামই ১২ টাকা। এখন মুরগির বাচ্চা ও খাবারের যে কৃত্রিম সংকট চলছে, তাতে ডিমেরও সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তাই পণ্যটির দাম আরও বাড়বে ভবিষ্যতে। আর এই কৃত্রিম সংকট কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সৃষ্টি করেছে।

 

মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মুরগির ডিমের দাম প্রতিদিনই পরিবর্তন হয়। বিষয়টি তো এমন নয় যে মুরগি একদিন খাবার বেশি খায়, একদিন কম খায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে- কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন সকালে নিলাম হয়, নিলামের দামটা ওরা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়। ওই দামেই সারাদেশে ডিম বিক্রি করা হয়। ডিমের এই দামটা স্থিতিশীল হওয়া দরকার। তবে আমরা চাইলেই কাজ হবে না। অনেকসময় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অধিদপ্তরকেই গুরুত্ব দেয় না। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে তাদের সঙ্গে বসতে হয়।

 

দেশে মুরগির বাচ্চা ও ডিম উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সংগঠন ‘ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’। খামারি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওই সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নিলামের কারণে প্রতিদিন ডিমের দামে পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, মাছ ও সবজির মতো ডিমের নিলাম হয়। তাই দামের পরিবর্তন হয় প্রতিদিন। সরবরাহ বেশি থাকলে দাম কমে, আর কম থাকলে দাম বাড়ে। প্রতিপিস ডিমের উৎপাদন খরচ হয় ১১ টাকা সাত পয়সা। তাই এখন ১১ টাকা দরে ডিম বিক্রি করেও খামারিরা লাভ করতে পারছেন না। আগে ডিমের দাম ৯ টাকা ছিল, তখন খামারিরা প্রতিপিস ডিম ২ টাকা লোকসানে বিক্রি করেছে। তাছাড়া গরমে মুরগি নিয়মিত ডিম দেয় না, কিছু মুরগি মারাও গেছে। আবার মুরগি ডিম না দিলে খামারিরা মুরগিগুলো বিক্রি করে দেয়, তখন ডিমের সংকট সৃষ্টি হয়।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট