চট্টগ্রামের রাউজানে কিশোরদের মধ্যে ধুমপানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মুহাম্মদ আলমগীর (৪৫) নামের এক সাবেক যুবদল নেতা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার দিকে আলমগীর তার দোকানে ছিলেন। এ সময় দোকানের সামনে কিশোরদের দুটি পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। বয়সে অল্প হলেও সংঘর্ষে জড়িত ছিল অন্তত ১৫ জন কিশোর, যাদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। পরিস্থিতি শান্ত করতে এগিয়ে যান আলমগীর। সমঝোতার চেষ্টা চালানোর একপর্যায়ে এক কিশোরের ঘুষিতে বুকে আঘাত পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যান।
স্থানীয়রা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চট্টগ্রাম শহরের আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেখানে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের ছোট ভাই মুহাম্মদ রফিক বলেন, কিশোরদের মধ্যে ঝামেলা দেখে তিনি থামাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘুষিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, পরে আর বাঁচানো গেল না।
মুহাম্মদ আলমগীর ছিলেন উরকিরচর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক কারণে তিনি দীর্ঘসময় গ্রামছাড়া ছিলেন। গতবছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি গ্রামে ফিরে এসে একটি মুরগির দোকান দেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিলেন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যাই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘুষির আঘাতেই তিনি পড়ে যান। তবে নিহতের পরিবার এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। হাসপাতালের রিপোর্টে হৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরিবার চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অনেকে দাবি করছেন, কিশোর গ্যাং ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে শুক্রবার উরকিরচর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীরের (৪৫) দু’দফা নামাজে জানাজা হারপাড়া গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
জানাজাপূর্ব সমাবেশে তিনি আলমগীরের কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে আমার সাথে সাথে ছিল, আওয়ামী সরকার আমলে দুই দফা বসতঘর ভাঙচুর করেছিল, সে দীর্ঘদিন এলাকায় আসতে পারেনি, এক এক করে চারজন আপনজন উরকিরচর থেকে চলে গেল, অসম্ভব একজন ভালো কর্মী ছিল তার কথা আমি ভুলতে পারব না।
জানাজায় রাউজানের বিভিন্ন ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বকোণ/জাহেদ/জেইউ/পারভেজ