দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। এ মহাসড়কের চন্দনাইশ বিজিসি ট্রাস্ট থেকে দোহাজারি ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে ২০২১ সাল থেকে চার বছরে ২৩ সড়ক দুর্ঘনায় ২২ নিহত ও ৭৪ জন আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়রে চন্দনাইশ অংশেই প্রাণ যায় চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের, সেই ঘটনার জেরে জন্ম হয় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। যেটার নেতৃত্বে আছেন ইলিয়াছ কাঞ্চন নিজেই। ১৯৯৩ সালে ২২ অক্টোবর ২ সন্তানসহ বান্দরবানে স্বামীর সাথে শুটিং সেটে যাওয়ার পথে গাছবাড়িয়া মাজার পয়েন্ট এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারায়। এ সময় তার দুই সন্তান ও কমেডিয়ান শামশুজ্জামান আহত হন।
একইস্থানে ১৯৮৭ সালের ২১ এপ্রিল একজন ম্যাজিস্ট্রেটের ১২ বছর বয়সী ছেলে শাহরিয়ার কামাল স্নিগ্ধ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। পরে তার পিতা ছেলের স্মৃতিতে মাজার পয়েন্ট ব্রিজের উত্তর পাশে শাহরিয়ার কামাল স্নিগ্ধ সড়ক নামে একটি পাখির স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে দেন। সে থেকে ঐ জায়গার নাম পক্কীমার্কা এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
কেন এত দুর্ঘটনা: দুর্ঘটনা কমাতে অপ্রশস্ত সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, লবণ পানিতে পিচ্ছিল সড়ক, মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচলের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল কোনভাবেই থামছে না। তাছাড়া অন্য জেলার চালকদের এ সড়কে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যস্ততম এ সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলছে।
স্থানীয়দের দাবি : মহাসড়ক ৬ লেইনে উন্নীত করা, লবণবাহী ট্রাক, ব্যাটারি চালিত রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা সময়ের দাবি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে ৬ লেইনে উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি, গণস্বাক্ষর, পদযাত্রা শুরু হয়েছে। ঈদ পরবর্তী লোহাগাড়ার জঙ্গলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।
বিপদজনক বাঁক ও অবৈধ স্টেশন : এই মহাসড়কে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩০ কিলোমিটার সড়ক সরু। এছাড়া বাঁক রয়েছে শতাধিক। কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাড় থেকে লোহাগাড়ার শেষ সীমানা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়কে ১০টি স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে টার্মিনাল। সে সাথে অটোরিকশার পাশাপাশি মহাসড়কে অবাদে চলছে ব্যাটারি চালিত রিকশা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে এ সকল অবৈধ স্টেশন গড়ে উঠা অবৈধ অটোরিকশা, ব্যাটারিকশা অসিএনজি টেক্সি, টেম্পু, যাত্রীবাহী হাইস-মাইক্রো চলাচলা করছে।
সড়ক ওয়ান বাই ওয়ান না হওয়াতে বাড়ছে যানবাহনের সংঘর্ষ : চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি গাছবাড়িয়া যাত্রী ছাউনীর সামনে যাত্রীবাহী ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ ৭ জন আহত হয়। ২৭ জানুয়ারি দোহাজারী বিওসি মোড়ে অটোরিকশা ও মাইক্রো বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নাঈম উদ্দীন (২৩) নামে একজন নিহত হন এবং ৩ জন আহত হন।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম দক্ষিণ) যা বললেন :
নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেছেন- ইতিমধ্যে আমরা টেন্ডার করেছি ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে। এখানে দুর্ঘটনা-যানজট কমানোর জন্য রাস্তা প্রসস্থের কাজ প্রতিনিয়ত করেছি। রাস্তা প্রশস্ত হওয়ার পরে যেসব কালভার্ট সংকীর্ণ রয়ে গেছে সেগুলোর কাজ চলছে। আমাদের যে প্রক্রিয়া বাদামতল থেকে কেরানিহাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত হয়ে গেছে। প্রশস্ত হওয়ার পড় আরো কিছু কালভার্ট সংকীর্ণ রয়ে গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হচ্ছে। আগেও হতো তবে এখন অনেকাংশে কমে গেছে। ড্রাইভারদের বেপরোয়া গতি যদি লিমিটেশনের মধ্যে তারা চলে আসে আশাকরি দুর্ঘটনা কমে যাবে। মানুষের সচেতনতা ড্রাইভার ভাইদের মনোযোগ, সাধারণ মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা বিষয়ে বুঝাতে পারি, তাহলে দুর্ঘটনা শূন্যে চলে আসবে। কেরানিহাটের পাশে রেললাইনের উপর ফ্লাইওভার প্রকল্প পাশ হয়েছে। তাছাড়া দোহাজারী বাইপাস করা হবে আরো অনেক জায়গা আছে সে ধরনের অনেক জায়গায় কাজ করা হবে এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প। যানজট যে জায়গায় আছে বাইপাস পরিকল্পনা সেখানে রয়েছে। এখানে জনগণ সচেতন থেকে সহযোগিতা করলে তাহলে এইসব জায়গা থেকে উত্তরণ সম্ভব। আমি এককভাবে করতে পারবো না। স্থানীয় প্রশাসন, সচেতন জনগণ মিলে কাজ করলে উত্তরণ সম্ভব। সমষ্টিগতভাবে সবাই মিলে একে অপরের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারলে তাহলে সম্ভব।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা যা বললেন :
হাইওয়ে ওসি শুভরঞ্জন চাকমা বলেছেন- আমাদের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সিঙ্গেল লাইন থেকে ৪ লাইন হলে দুর্ঘটনা কমবে। মহাসড়কের উপর দোহাজারী বাজার, খানহাট বাজার, রওশনহাট বাজারে ছেঁড়া ছেঁড়া সড়ক থেকে অটোরিক্সা, ব্যাটারিরিক্সা এসে জড়ো হয়। আমরা প্রতিদিন ৪/৫টি রিক্সা আটক করি। জরিমানা করে সেগুলো ছেড়ে দিই।
পূর্বকোণ/রাজীব