চট্টগ্রাম রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

লাইসেন্সে ঘুষ! কক্সবাজার বিআরটিএতে দুদকের হানা
দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের দল

লাইসেন্সে ঘুষ! কক্সবাজার বিআরটিএতে দুদকের হানা

কক্সবাজার সংবাদদাতা

৭ মে, ২০২৫ | ৯:১০ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জেলা কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদ প্রদানে ব্যাপক ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

বুধবার (৭ মে) দুপুরে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের একটি দল এই ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেন।

 

অভিযানকালে দুদক কর্মকর্তারা বিআরটিএ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র যাচাই করেন।

 

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

 

তিনি বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। বেশ কিছু নথি জব্দ করা হয়েছে এবং এগুলো গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হবে।

 

সহকারী পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন আরও জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দুদক কর্মকর্তারা কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে সরাসরি ফোনে কথা বলেন এবং অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পান।

 

অভিযানকালে আনিসুর রহমান নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, পঞ্চম শ্রেণির প্রত্যয়নপত্র জমা দিলেও তার কাছ থেকে লাইসেন্স বাবদ ৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি অষ্টম শ্রেণি পাস। এই অসঙ্গতি নিয়ে সেখানে দুদকের কর্মকর্তা এটির বিষয়ে জানতে চাইলে তা নিয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি বিআরটি এর কর্মকর্তা।

 

আরেকজন ভুক্তভোগী মো. ইউসুফ জানান, দালালদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে তার ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের এক সদস্য ছদ্মবেশে এক দালালের নম্বরে ফোন করলে, অপর প্রান্ত থেকে একজন গাড়ি চালাচ্ছেন বলে জানান। লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই দালাল প্রথমে ফরম পূরণ করে ১ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন, এরপর বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান।

 

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রাথমিক শর্ত অনুযায়ী, আবেদনকারীর লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে এবং অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস ও ১৮ বছর বয়স এবং পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ২১ বছর বয়স হতে হবে। পাশাপাশি, আবেদনকারীকে মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

 

অভিযানকালে কয়েকজন সেবাগ্রহীতা উল্লেখ করেন, সরকারি সেবায় দালাল বা মধ্যস্থতাকারীদের অনৈতিক মানসিকতার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতারাও নানা ঘাটতি বা অসঙ্গতি নিয়ে দ্রুত লাইসেন্স পেতে চান, যা দালালদের উৎসাহিত করে।

 

দুদকের সহকারী পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিয়মবহির্ভূত উপায়ে লাইসেন্স পাওয়ার মানসিকতাই দালালদের প্রধান হাতিয়ার। তিনি জানান, জব্দকৃত নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

অভিযানের পর মুখ খুলেছেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক উথোয়াইনু চৌধুরী। তিনি দুদকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও দালালদের যোগসাজশে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরিতে সিন্ডিকেট থাকার অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

 

তিনি আরও বলেন, দুদকের অভিযানকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি হয়তো হয়েছে। তবে, কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

 

এদিকে, একই সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদে ঘুষ লেনদেনসহ দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশব্যাপী একযোগে ৩৫টি বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে, যা এই খাতের ব্যাপক অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে।

 

পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট