কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালুচর থেকে উড়ন্ত উড়োজাহাজ লক্ষ্য করে এক তরুণের ফুটবল নিক্ষেপের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
শনিবার (৩ মে) সকাল থেকে ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে বলের গতিপথ দেখে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এটি হয়তো উড়োজাহাজের কাছাকাছি পৌঁছেছিল বা আঘাত করেছিল। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বাস্তবতা স্পষ্ট করেছেন।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, সম্ভবত কক্সবাজারের সুগন্ধা বা সিগাল পয়েন্টের কাছাকাছি সৈকত থেকে এক তরুণ দক্ষতার সাথে পায়ের কিকে একটি ফুটবল ছুড়ে মারছেন উড়োজাহাজের দিকে। ভিডিওতে মনে হচ্ছিল, বলটি প্লেনের অবস্থান থেকে বেশ খানিকটা উপরে উঠে গেছে। আশপাশের দৃশ্যে সৈকতের পরিচিত ল্যান্ডমার্কগুলো দেখা যায়, যা ভিডিওটির ধারণস্থান সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। উড়ন্ত প্লেনের কাছাকাছি কোনো বস্তু নিক্ষেপ করা হলে তা সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে—এই চিন্তা থেকে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তবে এই নিয়ে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি ও শঙ্কা দূর করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা। তিনি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে, ভাইরাল ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে ফুটবলটির উড়োজাহাজ পর্যন্ত পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই।
গোলাম মোর্তজা বলেন, ‘বিমানবন্দর দিয়ে উড্ডয়নের সময় সাধারণত উড়োজাহাজগুলো সমুদ্রসৈকতের ওপর দিয়ে কমপক্ষে ১৪০০ মিটার বা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকে। আর অবতরণের সময়ও সর্বনিম্ন ১ হাজার মিটার বা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় থাকে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সেক্ষেত্রে বালুচর থেকে স্বাভাবিকভাবে ছুড়ে মারা একটি ফুটবল বিমান পর্যন্ত কোনোভাবেই আসার সুযোগ নেই। ভিডিও দেখে হয়তো মনে হতে পারে বল উপরে উঠেছে, কিন্তু প্লেনের প্রকৃত উচ্চতা অনেক বেশি।’
তবে এই ঘটনার সূত্র ধরে বিমানবন্দর এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টিও মনে করিয়ে দিয়েছেন ব্যবস্থাপক। তিনি জানান, বিমান চলাচলের সুবিধার জন্য সমুদ্রসৈকত এলাকায় ড্রোন ওড়ানো, আকাশে আতশবাজি ফোটানো বা যেকোনো বস্তু নিক্ষেপ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
গোলাম মোর্তজা সর্বসাধারণকে সতর্ক করে বলেন, ‘উড়ন্ত বিমান লক্ষ্য করে ফুটবল ছুড়ে মারাসহ যেকোনো কিছু নিক্ষেপ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি করা থেকে সবারই বিরত থাকা উচিত। আজকের ঘটনা হয়তো সরাসরি ঝুঁকি তৈরি করেনি, কিন্তু ভবিষ্যতে এমন কার্যকলাপ বড় বিপদের কারণ হতে পারে। বিমানবন্দর এলাকার নিরাপত্তা বিধি মেনে চলা সবার দায়িত্ব।’
সুতরাং, ভাইরাল ভিডিওটি দৃষ্টিনন্দন হলেও, ফুটবলটি আসলে উড়োজাহাজের নাগালের বাইরেই ছিল, কর্তৃপক্ষের এই স্পষ্ট বক্তব্য জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে, তবে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব আরও একবার সামনে চলে এসেছে।
পূর্বকোণ/আরফান/পারভেজ