চট্টগ্রাম বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

সর্বশেষ:

কেইপিজেডে দু’বছরে শ্রমিক সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড)

কেইপিজেডে দু’বছরে শ্রমিক সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে

সুমন শাহ, আনোয়ারা

২৩ এপ্রিল, ২০২৫ | ২:০১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশসহ নানান সুযোগ সুবিধা সম্বলিত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) যেন বিদেশি বিনিয়োগের এক আদর্শিক এবং পরিকল্পিত জায়গা। যার কারণে এই কেইপিজেডে রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা।

 

এবার দীর্ঘদিনের ভূমি জটিলতা নিরসনের ফলে এই সম্ভাবনা যেন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ইতিমধ্যে কেইপিজেডের নিজস্ব ৪৮ শিল্প কারখানার পাশাপাশি বর্তমানে আমেরিকা ও জার্মানির তিনটি কারখানা চালু রয়েছে। এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলে ১৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানান কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। ভূমি সমস্যা সমাধান হওয়ায় এখন বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা কেইপিজেডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কেইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান।

 

জানা যায়, আশির দশকে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প কোটামুক্ত সুবিধা পেত। কিহাক সাং এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানির সুবিধা নিতে ১৯৮০ সালের মে মাসে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসে প্রতিষ্ঠা করেন ইয়াংওয়ান বাংলাদেশ লিমিটেড নামের কারখানা। তার প্রতিষ্ঠিত ইয়ংওয়ান থেকে এক সময় কেইপিজেড নামে রপ্তানি প্রক্রিয়া জোনের যাত্রা শুরু হয়। এ শিল্পাঞ্চলের জন্য ১৯৯৭ সালে দুই হাজার ৪৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে অধিগ্রহণকৃত জমি কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে সরকার।

 

কারখানা স্থাপন ও উৎপাদনে যায় ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে। বর্তমানে ইয়াংওয়ানের ৪৮টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। এসব কারখানায় ৩৩ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু জমি আয়ত্বে থাকলেও মালিকানা স্বত্ব বা দলিল ছিল না। এখন দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানা স্বত্ব ফিরে পায় কোরিয়ান ইপিজেড। আগামী দুই বছরের মধ্যে কেইপিজেডের কাজ চলমান শিল্পকারখানাগুলো উৎপাদনে গেলে কর্মরত শ্রমিক সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কইপিজেড সূত্রে জানা যায়, ২ হাজার ৪৯২ একর আয়তনের কেইপিজেড পুরোটাই পরিবেশবান্ধব শিল্প এলাকা। এখানকার প্রায় ৮২৩ একর জায়গা সবুজায়নের জন্য রাখা হয়েছে। ওপেন স্পেস রয়েছে পৌনে ৫শ একর জায়গা। এরমধ্যে ৪শ’ একরজুড়ে গড়ে উঠেছে ৪৮টি কারখানা। বিদেশি কিংবা ইয়ংওয়ানের নিজস্ব বিনিয়োগের জন্য আরো অন্তত ৪শ’ একর জায়গা রয়েছে। বর্তমানে কেইপিজেডের নিজস্ব ৪৮ শিল্প কারখানার পাশাপাশি আমেরিকা ও জার্মানির তিনটি কারখানা চালু রয়েছে।

 

আমেরিকাভিত্তিক এমেরিকান এফার্ড সুতা উৎপাদন ও পেজার বাংলাদেশ এপ্সেরিজ উৎপাদনে জড়িত। জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনজেল বার্ডের বিনিয়োগ রয়েছে গার্মেন্টস খাতে। তিন প্রতিষ্ঠান মিলে ১৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আইটিখাতে বড় বিনিয়োগের আশা করছে কেইপিজেড। নিজস্ব বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে প্রতিবছরই এগিয়ে যাচ্ছে কেইপিজেড। ২০১২ সালে উৎপাদন শুরুর পর ১৩ বছরে রপ্তানি ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রথম ৭ বছরে রপ্তানি ছিল মাত্র ৫ লাখ ডলার। মূলত গত ৫ বছরে রপ্তানিতে কেইপিজেডে ঈর্ষনীয় সাফল্য এসেছে।

 

চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। কেইপিজেডের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান, কেইপিজেডের বড় সুবিধা হলো ৪০ মেগাওয়াটের নিজস্ব সোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ১৬ মেগাওয়াট নিজেদের কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে, বাকি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীদের বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। এছাড়া বিদেশের যেকোনো জায়গার চেয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকের মজুরি কম, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় সুযোগ। কেইপিজেডের পাশেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান হওয়ায় বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনা এবং পন্য রপ্তানি করার সুবিধা রয়েছে, এছাড়া একপাশে চট্টগ্রাম নগরের কাছাকাছি এবং অন্যপাশে কর্ণফুলী টানেল হওয়ায় নির্বিঘ্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে।

 

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কেইপিজেডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে জানিয়ে কেইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ভূমি জটিলতার কারণে নানান সুবিধা থাকার পরও অনেক বিনিয়োগকারী ফিরে গেছে, এখন ভূমি জটিলতা নিরসন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কেইপিজেডের প্রতি পজিটিভ মনোভাব পোষণ করেছেন। এখন পর্যন্ত কেইপিজেডে ৩৩ হাজার লোকের কর্ম সংস্থান হয়েছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে কেইপিজেড কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট