বান্দরবানের থানচির দুর্গম এলাকায় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের একটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির যোগ দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেখান থেকে তাদের শতাধিক সদস্য সরে গিয়ে মায়ানমার সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে।
রবিবার এসব সদস্যরা উপজেলার রেমাক্রি, তিন্দুসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সাঙ্গু নদীপথে ১৯টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা যোগে তারা সীমান্তের দিকে চলে যায়।
সীমান্তের ওপারে চিন রাজ্যের লাবওয়া ক্যাম্পে তারা অবস্থান নিয়েছে। এই ক্যাম্পটি মায়ানমার সেনাবাহিনী থেকে আরাকান আর্মি গতবছর প্রথম দিকের যুদ্ধাবস্থায় দখল করে নেয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী তুপুই ক্যাম্পেও তারা অবস্থান নিয়েছে।
রবিবার থানচির রেমাক্রি বাজারের কাছে বর্ষবরণ সাংগ্রাই উৎসবের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশাসনের টনক নড়ে। আরাকান আর্মির তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায় স্থানীয় মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের সাথে আরাকান আর্মি সদস্যরা পোশাক পরিহিত অবস্থায় জলকেলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠে। সেখানে বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি রাখাইন এর একটি পতাকাও উড়তে দেখা যায়। গত ১৬ই এপ্রিল রেমাক্রি ঝর্নার কাছে এই উৎসবটি হয়। দুর্গম এলাকায় আরাকান আর্মির তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভিডিও ছবিগুলো তাদের পেইজে আপলোড করে বলে জানা গেছে।
সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী পদ্ম মুখ, রেমাক্রি, তিন্দু, বড় মদক, ছোট মোদক, ইয়াংরি, হ্নাফাখুম, লিক্রে সহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে ১১০ সদস্য ১৯ টি ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় সীমান্তের লাবওয়া ক্যাম্পের দিকে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন বর্ষবরণ ওই অনুষ্ঠানে আরাকান আর্মির সাথে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মংপ্রু, হেডম্যান রনি মারমা, জনসংহতি সমিতির নেতা নুমংপ্রু, ইউপি সদস্য হ্লাচই প্রু সহ অনেকেই যোগ দিয়েছেন। ২০২০ সালের পর এই প্রথম আরাকান আর্মি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার ভিতরে কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জানিয়েছেন বিষয়গুলো আমরা খবর পাওয়ার পর সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করেছি। তবে আরাকান আর্মির সদস্যরা এখন বাংলাদেশে ভূখণ্ড থেকে সবাই সরে গেছে। বিষয়গুলো স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে করা হচ্ছে। বর্তমানে এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে ইউএনও জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছিল বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ইমরুল হাসান এর সাথে।
তিনি জানিয়েছেন, ওই উৎসবে আরাকান আর্মির কোন সশস্ত্র সদস্যরা ছিল না। যারা ছিলেন তারা সহযোগী বা সমর্থক ও স্থানীয় লোকজন। তারা সেখানে এলাকার লোকজনদের সাথে উৎসবে অংশ নিয়েছিল। যে ইউনিফর্ম গুলো দেখা গেছে সেগুলো স্থানীয় বাজারেও পাওয়া যায়। তবে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর বিজিবি কঠোর অবস্থানে গিয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে কোন আরাকান আর্মির সদস্যরা নেই বলে জানিয়েছেন বিজিবির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পূর্বকোণ/মিনার/জেইউ