হামাগুড়ি দিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মোহাম্মদ ইউনুস। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হলেও থেমে থাকেনি দুর্বার প্রয়াস। তার লক্ষ্য, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশ ও প্রতিবন্ধী মানুষের সেবা করা।
টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা ইউনুস টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। চলতি ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। পরীক্ষার কেন্দ্র টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায়। হামাগুড়ি দিয়ে কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
ইউনুস বলেন, আল্লাহ আমাকে যেভাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। প্রতিবন্ধী হলেও আমি স্বপ্ন দেখি উচ্চশিক্ষার, যাতে ভবিষ্যতে সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। বর্ষাকালে স্কুলে যাতায়ত করতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। তবে সহপাঠী, শিক্ষক ও আশপাশের মানুষের সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। বাবা আব্দুস শুক্কুর একজন নাইট গার্ড। আট সদস্যের পরিবার চলে একমাত্র বাবার আয়ে। আর্থিক সংকটে গাড়িতে করে স্কুলে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউনুসকে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছি জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে টেকনাফ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছি।
তার মা নুরুজ্জামান বেগম বলেন, জন্ম থেকেই ইউনুস দুই হাঁটু ও হাতের সাহায্যে চলাফেরা করে। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ আমাদের তাক লাগিয়ে দেয়। দিনরাত চেষ্টা করে সে। আমরা চাই, সমাজের সহায়তায় সে যেন আরও এগিয়ে যেতে পারে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, এ কেন্দ্রে মোট ৪০১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন অনুপস্থিত। ইউনুসসহ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্র সচিব ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাব্বির আহমদ বলেন, প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর খোঁজখবর রাখা হচ্ছে নিয়মিত। খাতা জমার সময় তারা রোল নম্বর ঠিকমতো লিখেছে কী-না, তাও নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই ইউনুসের বিষয়ে আমরা অবগত। তার মতো শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক আচরণ ও সুযোগ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ