বাড়ির সামনে বেশ কিছুটা পরিত্যক্ত জমি ছিলো গৃহবধূ সেলিনার (৪০)। শখের বসে সেই জমিতে শিম, বেগুন, মরিচসহ দু’য়েক রকম শাক-সবজি রোপণ করতেন তিনি। এতে কখনো কিছু সবজি পেতেন আবার কখনো আশাহত হতেন তিনি।
তার এই প্রচেষ্টা দেখে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিত্রা বিশ্বাস পরামর্শ দেন সেখানে পারিবারিক পুষ্টি (সবজি) বাগান করতে। আর এতে কৃষি বিভাগ সব সহযোগিতাই করবে।
এতে উদ্বুদ্ধ হন সেলিনা। সেই শুরু। পরে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা আর সেলিনা ও তার স্বামীর পরিশ্রমে ঐ পরিত্যক্ত জমিতে হয়ে যায় চমৎকার একটি সবজি বাগান। মাত্র ৮ শতক জমিতে তার ২২ রকমের সবজির উৎপাদন এখন নজর কাড়ছে সবার। ব্যতিক্রমী এই সবজি বাগানটি গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘোড়ামরা গ্রামে।
সেলিনা এই গ্রামের আবদুল হামিদের স্ত্রী। সরেজমিনে কথা হয় সফল কৃষাণী সেলিনা বেগমের সাথে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, পাহাড়ের কাছে ঘরের সামনে ৮ শতক পরিত্যক্ত জমি আছে। এ জায়গাটিতে তিনি ঢেঁড়স, কচু, লাল শাক, বেগুন চাষ করেছিলেন। তবে সেগুলো গোছানো ছিলো না। এক পর্যায়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার মিত্রা বিশ্বাসের পরামর্শ ও সহযোগিতা পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরি করেন। এ জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সেলিনাকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়।
পরে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী সহকারী কৃষি অফিসার মিত্রা বিশ্বাস সেলিনাকে তার পুরো পরিত্যক্ত জমিটিকে আলাদা আলাদ বেড আকারে তৈরি করে বিনামূল্যে নানান সবজির চারা, বীজ, সার, বালাইনাশক প্রদান করেন। সেখানে পৃথক পৃথকভাবে চাষ করা হয় হলুদ, বেগুনি, সাদা ফুলকপি, বাঁধাকপি, লম্বা ও গোল বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, টমেটো, বাদাম, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, মুলা, মটরশুটি, ঝারসিম, তিসি, সরিষা, পালং শাক, লাল শাক, ধনিয়া, শসা, করলা, লাউ, সিম, পেঁয়াজ, বস্তায় আদা, পুদিনাসহ ২২ রকমের ফসল। ইতিমধ্যে তার বাগান থেকে অনেক সবজি বিক্রি হয়েছে। তার বাড়ির জন্য কোন সবজি এখন কিনতে হয় না। এ জমি থেকে প্রতি মাসে গড়ে এখন তিনি কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা আয় হয়। ফলে তিনি তার সংসারের স্বচ্চলতা ফেরাতে ভূমিকা রাখছেন।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মিত্রা বিশ্বাস বলেন, সেলিনার চেষ্টা দেখে আমি কৃষি অফিসার হাবিবুল্লা স্যারের কাছে নিয়ে গেলে সেলিনাকে প্রশিক্ষণ শেষে চারা, সার, বালাইনাশকসহ সবই বিনামূল্যে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। পাশাপাশি আমি নিয়মিত এসে চাষাবাদ তদারকি করেছি। ফলে তিনি সফল হয়েছেন। এখন তার আর্থিক স্বচ্চলতা ফিরেছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লা বলেন, আমরা তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়তে উদ্বুদ্ধ করে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এখন তিনি সফল কৃষাণী। সবাই তার সফলতা দেখে বিস্মিত। ভবিষ্যতে এভাবেই তাকে সহযোগিতা করতে চাই আমরা। যাতে আরো এগিয়ে যেতে পারেন তিনি।
পূর্বকোণ/ইব