বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বাঁশখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার আহমদের সাথে থেকে দায়িত্ব পালনকালে খবর আসে ৭১ সালের ১৯ মে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাতকানিয়া হয়ে ১০টি সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে ভারী অস্ত্রসস্ত্র সহকারে বাণীগ্রামে প্রবেশ করে। নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এই সময় ২২ জনকে খুন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাণীগ্রাম আক্রমণের পর কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রাম থেকে বিভিন্ন এলাকার নিরীহ ৪০ জনকে ধরে নিয়ে বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। তিনি সাধনপুর ইউনিয়নে জন্ম হলেও কিশোর বয়স থেকে চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া এলাকায় বসবাস করতেন। মাদ্রাসায় পড়–য়া অবস্থায় তখন বয়স ছিল ১৭-১৮। তিনি বলেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ভাষণ শুনে বাঁশখালী অনেক মানুষের সাথে নিজেকেও যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে নিলাম। গ্রামের বাড়িতে এসে যোগাযোগ শুরু করে দিলাম। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিলাম। শুনতে পারি কালুরঘাটে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আনোয়ারা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া আঞ্চলিক কমান্ডার স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার আহমদের সাথে যোগাযোগ করেই প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নিই। বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ছমিউদ্দিনের অধীনে সাধনপুর পাহাড়ের পাদদেশে প্রশিক্ষণের জন্য স্থান নির্ধারণ হয়। আমাদের সাথে ছিলেন সিদ্দিক আহমদ, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়েজ আহমদ, আলী আহমদ, রণজিৎ কর, শক্তিপদ শর্মা, নুরুল ইসলাম, নীলরতন ঘোষসহ ২৫ জনের একটি টিম।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই এন্ট্রিট্যাংক মাইন, রাইফেল, স্টেনগান চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল। আমাকে ক্যাম্প কমান্ডার বিভিন্ন সময় এলাকায় গিয়ে গোয়েন্দার কাজ করার জন্য নির্দেশ দিতেন। আমিও যথাসময়ে দায়িত্বগুলো পালন করে যায়। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হলে ক্যাম্প কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বিষয়টি মীমাংসা করে দিতেন। তিনি বলেন, ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়। ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতানুল কবির চৌধুরী, ডা. এস.এম ইউছুপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার আহমদ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার ছমিউদ্দিন ও শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বাঁশখালী গুনাগরীতে অবস্থিত খানখানাবাদ ভূমি অফিস, গুনাগরী ওয়াফদা অফিস আক্রমণ করি। এছাড়াও সাধনপুর পরিষদ ভবন আক্রমণ, সিও অফিস, থানা আক্রমণে আমি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলাম।
তিনি বলেন, বাঁশখালী পাহাড়ি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা পটিয়ার কমান্ডার বারেক, আলম, বোয়ালখালীর আব্দুর শুক্কুর, আবুল হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, বাঁশখালীর আব্দুর রহমান চৌধুরী ও নেভি আজিজুল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল সাধনপুর ইউনিয়নের মরহুম রাজা মিয়ার সন্তান। তিনি ৩ সন্তানের জনক। বর্তমানে একটি মুদির দোকানের ব্যবসা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। খুব কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত হচ্ছে বলে জানান।
পূর্বকোণ/পিআর