চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

মধ্যম শাকপুরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকবাহিনী : সুনীল কুমার বড়ুয়া

পূজন সেন, বোয়ালখালী

৬ মার্চ, ২০২৫ | ১২:১৭ অপরাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনীল কুমার বড়ুয়া বলেন, মধ্যম শাকপুরা গ্রামে আগুন দিয়ে প্রায় বাড়িঘর ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছিল পাকবাহিনী। সেইদিন বহু মানুষকে হত্যা করেছিলো তারা। জীবন্ত মানুষকে জলন্ত বাড়িতে ছুঁড়ে দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। যাকে যেখানে পেয়েছে গুলি করে হত্যা করেছে সেইদিন।

 

তখন এপ্রিল মাস। চারপাশে পোড়া গন্ধ। তারপরও দুয়েকটি বাড়িঘর রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলো অজানা কারণে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় ফিরে গিয়েছিল পাকবাহিনীর দল। সেইদিন পাকবাহিনীর দেয়া আগুন থেকে আমাদের বাড়িঘর রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলো। তবে পাকবাহিনীর দল আরাকান সড়কের বড়ুয়ার টেক এলাকার আশেপাশের প্রায় বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। দৃষ্টিতে মাইলের পর মাইল দেখা যাচ্ছিল। এরপর পাড়ার সবাই মিলে পাহারা বসিয়েছিলাম।

 

বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যম শাকপুরা গ্রামের সন্তান ২২ বছরের তরুণ সুনীল কুমার বড়ুয়া তখন কাননুগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজের ছাত্র। তিনি ৫ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে সবার বড়। পিতা কমরেড রাজেন্দ্র লাল বড়ুয়া।

 

তিনি বলেন, এপ্রিলের শেষের দিকে দিনের বেলায় চৌধুরী পাড়া থেকে এক মেয়েকে ও তার মামাতো ভাইকে হাত বেঁধে শুকনো জমি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুইজন বিহারী। বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাদের আটকানোর প্রস্তুতি নিলে পাড়ার লোকজন বললো, তাদের কাছে বন্দুক থাকতে পারে। কেউ এগুতে সাহস করলো না। তখন আমরা কয়েকজন মিলে এগিয়ে গেলাম। পাথরের টুকরো, লবণ মরিচের গুঁড়ো ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে। তাদের এসব ছুঁড়ে মারতেই একজন ড্যাগার নিয়ে দৌড়ে আসলে আমরাও দৌড়ে পিছু হটি।

 

এরপর পাড়ার সবাইকে জানালাম তাদের কাছে বন্দুক নেই। তারপর শাকপুরা চৌমুহনী ও বড়ুয়ার টেক থেকে শতশত লোক এগিয়ে যায়। আরাকান সড়ক দিয়ে পাকসেনাদের গাড়ি গেলে স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে সকলে ওই জমিতে তাদের ধাওয়া দিলে দুই বিহারী দৌড়ে সড়কে চলে আসে এবং বাসে করে পালিয়ে যায়। সেইদিন বিকেলে পাড়ার সবাই বলাবলি করতে লাগলো- সুনীলের কারণে এখন বিপদ বাড়লো। ওরা গিয়ে হয়তো পাকবাহিনীকে খবর দেবে। সেইদিন বিকেল বৈঠক ডাকা হলো গ্রামে। বাবা আমাকে বৈঠকের আগে বলে দিয়েছিলো কেউ বকলেও যেন চুপ থাকি। ওইদিন রাতেই বাবা বললো বাড়িতে থাকা ঠিক হবে না, যুদ্ধে চলে যাও। এরপর জ্যৈষ্ঠপুরা হয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের অম্পিনগর তেলিয়ামুড়া এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগ দিই।

 

সুনীল কুমার বড়ুয়া সোনালী ব্যাংক পটিয়া শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এখন অবসর সময় পার করছেন তিন মেয়ে ও এক ছেলের পরিবারের সাথে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট