চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থে তিন দিনব্যাপী শিব চতুর্দশী মেলার দ্বিতীয় দিনে তীর্থভূমিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর আগমন হয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পুণ্যার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। বুধবার শিব চতুর্দশী তিথি হওয়ায় এদিন সর্বাধিক ভক্তের সমাগম হয়েছে। অন্যদিকে এখানে এসে নিরাপদে তীর্থ দর্শন করে লাখ লাখ পুণ্যার্থী ফিরে গেলেও দুই জন নারী-পুরুষ ভিড়ের চাপে স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
সরেজমিনে বুধবার মেলার দ্বিতীয় দিনে চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থ ঘুরে দেখা গেছে, এদিন সারাদেশ থেকে লাখ লাখ পূণ্যার্থী এসেছেন চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থে। ভক্তরা মহাতীর্থে ব্যাসকুণ্ডে পূণ্য স্নান শেষে একে একে ভৈরব মন্দির, ভবানী মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, বীরুপাক্ষ, চন্দ্রনাথ মন্দিরসহ অসংখ্য মন্দির দর্শন ও পূজা অর্চনা করছেন।
পরিদর্শনকালে পুণ্যার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে সাড়ে তিন কি.মি. সুউচ্চ দুর্গম পাহাড়ে চন্দ্রনাথ দর্শন করে খুবই খুশি। তবে এ দীর্ঘ পথ আসা যাওয়ায় তাদেরকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে।
ঢাকা থেকে চন্দ্রনাথ দর্শন করতে আসা পুণ্যার্থী নন্দ সরকার ও চৈতি সরকার জানান, তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো চন্দ্রনাথ ধাম দর্শন করা। অনেক দিন পরে হলেও তাদের সে আশা এবার পূরণ হয়েছে। তীব্র রোদের মধ্যে তারা সাড়ে তিন কি.মি. পাহাড়ি পথ পেরিয়ে চন্দ্রনাথে গিয়ে পূজা দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। ভবিষ্যতে আবারো এখানে আসার জন্য সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন।
চাঁদপুরের কচুয়া থেকে এসেছিলেন মলি দাশ, কুমিল্লা থেকে চন্দ্রনাথ মজুমদার। তারা দুজনেও জানান, এ তীর্থ ভূমিতে এসে তাদের মনের আশা পূরণ হয়েছে। চন্দ্রনাথ ঈশ্বরের কাছে আরেকটি মানত করেছেন যেন তাকে একটি পুত্র সন্তান দেন। তিনি বিশ্বাস করেন ভগবান তার এ আশাও পূরণ করবেন। এদিকে এদিন লাখ লাখ পুণ্যার্থী নির্বিঘ্নে তীর্থ দর্শন সম্পন্ন করলেও পাহাড় চূড়ায় চন্দ্রনাথ দর্শনকালে দুই জন পুণ্যার্থী ভিড়ের চাপে ও গরমে স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম জানান, দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে এই গরমে তীর্থ দর্শন সত্যিই কঠিন। এ অবস্থায় যাদের শ্বাসকষ্ট বা কোন রোগ থাকে তারা তো খুবই ঝুঁকিতে থাকে। এমনি দু’জন নারী পুরুষ তীর্থ দর্শনে গিয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। পুরুষটি নাম বান্টু। বয়স আনুমানিক ৫০। তার বাড়ি চট্টগ্রামের চকরিয়া বলে জানা গেছে। এছাড়া মহিলাটির বয়স আনুমানিক ৫০। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম জানান, এ বিশাল মেলায় লাখ লাখ পুণ্যার্থীর আগমন হয়েছে। গত দুই দিন ধরে সম্পূর্ণ মেলাটি মনিটরিং করছি আমরা। যেখানেই কোন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা চোখে পড়েছে সেখানেই সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে ভিড়ে দু’জন মারা গেছে। এছাড়া বড় কোন সমস্যা ছাড়াই তীর্থ যাত্রীরা পূজা অর্চনা করে ফিরে যাচ্ছেন।
সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম তীর্থ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. চন্দন দাশ বলেন, এত বড় একটি মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই কঠিন। তবুও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা এবং অসংখ্য স্বেচ্চাসেবীর অক্লান্ত পরিশ্রমে মেলাটি সুষ্ঠুভাবে চলছে। শিব চতুর্দশী তিথি থাকায় বুধবার ১০ লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর আগমন হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন পুণ্যার্থী স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
পূর্বকোণ/সৌমিত্র/জেইউ/পারভেজ