প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রে পড়েছে আনোয়ারা-বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। ৫ মাস ধরে ঝুলে রয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়া। আগামী বর্ষা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী।
গত বছরের অক্টোম্বর মাসে প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আগামী বর্ষায় ভাঙন ঠেকাতে ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছিল পাউবো। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় নৌবাহিনী। এরপর আটকে থাকে টেন্ডার প্রক্রিয়া।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে নৌবাহিনীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রস্তাব দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে নৌবাহিনী। দুই সংস্থার মধ্যে অনেকটা সমঝোতা হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
২০২৪ সালের ২৭ মে বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গুর তীর প্রতিরক্ষা-বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৮৭৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে প্রকল্পের মেয়াদ-কাল ধরা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কুমার বড়ুয়া পূর্বকোণকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে নৌবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে। কাজের অর্ধেক বাস্তবায়ন করবে নৌবাহিনী, অর্ধেক করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে কাজ করা হবে।
চট্টগ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন। ১৬শ কোটি টাকার প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে নৌবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন সুরক্ষায় বেড়িবাঁধ প্রকল্প নৌবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে করার উদাহরণ টেনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক বলেন, আমরা নৌবাহিনীকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। তা না হলেও পুরো কাজে নৌবাহিনীকে মনিটরিংয়ে রাখতে চাই।
এলাকাবাসীর জানায়, বর্ষা আসলেই আতঙ্কে দিন কাটে উপকূলবাসীর। সাগরের ঝাপটায় কেড়ে নেয় মানুষের ঘরবাড়ি, জমা-জমি। প্রকল্পের কাজ দীর্ঘায়িত হলে বাড়বে মানুষের দুর্ভোগ। বর্ষাকালে তীব্র ভাঙনে বিশাল এলাকায় সাগরের পানি ঢুকে বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপকূলবাসীকে রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে বাঁশখালীর তিনশ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আপৎকালীন ভাঙন ঠেকাতে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পুরো উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় সাগর-নদী গ্রাস করে নিচ্ছে মানুষের মানুষের বাড়িঘর ও সহায়-সম্পদ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নৌবাহিনী ও পানিসম্পদ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে টানাপোড়নের অবসান ঘটেছে। বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘায়িত হওয়ায় মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বাড়ছে। কারণ বর্ষা আসলেই ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটে উপকূলবাসীর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইন সাহীদ পূর্বকোণকে বলেন, আট প্যাকেজ কাজের মধ্যে চারটি বাস্তবায়ন করবে নৌবাহিনী, চারটি করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পূর্বকোণ/ইব