কক্সবাজারের পেকুয়ায় আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে পুত্রবধূসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের তিনদিন পর ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নালিশি অভিযোগ দায়ের করেন।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবির ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে অধিকতর তদন্তের পর পরবর্তী ধার্য্য তারিখের মধ্যে প্রতিবেদনের জন্য পেকুয়া থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- নিহতের শাশুড়ি ফাতেমা বেগম (৩৮), নিহতের স্ত্রী হাদিয়া জান্নাত রিজা প্রকাশ নিশু (২১) ও নানা শ্বশুর মো.মনির (৫৮)।
সুত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে মো.হারুন (২২) নামের এক টমটম চালক কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে মগনামা ইউনিয়নের নুইন্যার পাড়ার রেড ক্রিসেন্ট সাইক্লোন শেল্টার থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে হারুন মারা যান। নিহত হারুন পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মিয়াজি পাড়ার মো. নোমানের ছেলে। বিষপান করার আগে নিহত হারুন বিষ পান করবে বলে ভিডিও বার্তা দেন। ভিডিও বার্তায় স্ত্রীসহ শ্বশুর শাশুড়িকে বিষপানের জন্য দায়ী করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দু’বছর আগে মো.হারুন ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের সবজীবন পাড়ার হেলাল উদ্দিনের মেয়ে হাদিয়া জান্নাত রিজা প্রকাশ নিশুর বিয়ে হয়েছে। হারুন পেশায় টমটম চালক। বিয়ের পর কয়েক মাস হারুন স্ত্রীকে নিয়ে মগনামায় নিজ বাড়িতে থাকতেন। এক বছর সবজীবন পাড়ায় শ্বশুর বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ঘরজামাই থাকেন। পরিশ্রমের সঞ্চিত দুই লাখ টাকা শাশুড়ির কাছে জমা রাখেন। একটি নতুন টমটম খরিদ করতে জামানত রাখা দুই লাখ টাকা শাশুড়ির কাছ থেকে ফেরত চান। এতে করে শাশুড়ি ও মেয়ের জামাইর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। টাকা ফেরত পেতে হারুন একাধিকবার গেলেও টাকা তো ফেরত দেয়নি বরং উল্টো তাকে অপদস্ত করা হয়েছে। টাকা না পেলে সে নিজে আত্মহত্যার করবেন এমন আল্টিমেটামও দিয়েছিলেন শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে। স্ত্রী নিশু ও শাশুড়ি মিলে হারুনকে লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে চরমভাবে অপমান করে। এক পর্যায়ে ঘটনার দিন সকালে বিষের বোতল নিয়ে নুইন্যার পাড়ার সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনার তিনদিন পর পূত্রকে আত্মহত্যার প্ররোচিত করা হয়েছে; এমন অভিযোগে নিহতের পিতা বাদী হয়ে পুত্রবধূসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নালিশি অভিযোগ দেন।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা জানান, লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড হয়েছে। তদন্তের পরেই নালিশি অভিযোগের প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।
পূর্বকোণ/পিআর/পারভেজ