চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

হাটহাজারীতে অবাধে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি

খোরশেদ আলম শিমুল, হাটহাজারী

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন বিলের আবাদি জমির মাটি নির্বিচারে স্কেভেটর দিয়ে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি। প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চালাচ্ছে এ মাটির ব্যবসা। এসব মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রতি ট্রাক মাটি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। আর এসব মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে। এইসব মাটি দিয়ে আবাসনের জন্য অন্যত্র ভরাট করা হচ্ছে কৃষি জমি, পুকুর, ডোবা। ফলে একদিকে ঊর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি। অপরদিকে ভরাটের কারণে কমছে চাষের জমি।

 

জানা যায়, প্রশাসনের অভিযান না থাকায় মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই মাটি কাটার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সদস্যরা জড়িত। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও নির্বিকার। মাটিচোর চক্র প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসন চুপ রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর শুধু হাতবদল হয়েছে।

 

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি ব্যবসায়ীরা অনেক কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমিতে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্ন বাড়ি-ভিটে, পুকুর ভরাটে এবং ইটভাটায়। কোনমতে একটি জমির মালিক থেকে মাটি কিনে নিতে পারলে, এই জমি থেকে গভীরভাবে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে পাশের জমির মালিক বাধ্য হয়ে মাটি দিতে হয় প্রভাবশালীদেরকে । নির্বিচারে চলছে মাটি কাটা হলেও মাঝে মাঝে দুই একটি লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন তাদের দায়িত্ব শেষ। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ডাম্প ট্রাক চলার কারণে কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, এবং ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

 

কৃষকরা বলেন, রাজনীতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মাটি কাটার ব্যবসায় জড়িত। নামমাত্র মূল্য দিয়ে কৃষিজমির মাটি স্কেভেটর দিয়ে কাটা হয়। এসব মাটি ভরাট কাজের জন্য বিক্রি করা হয়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, কৃষি জমির মাটি কাটতে গিয়ে আশপাশে শত শত একর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে এসব জমি আর চাষাবাদের উপযোগী থাকে না। তারা এলাকার রাজনৈতিক দলের লোকজন হওয়ায় বাধা দেওয়ার সামর্থ্য নেই জমির নিরীহ মালিকদের। ফলে ফসলি জমিকে পুকুর বানাচ্ছে।

 

হাটহাজারী পৌরসভার মিরের হাট এলাকার এক ব্যবসায়ী তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, উপজেলার পাশে ফটিকা বিলে কৃষি জমির থেকে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটছে ১ মাস ধরে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব। কিছু সুবিধাভোগী মানুষ টাকা দিয়ে মাটি বিক্রি করছে। ক্ষতি করছে হাজারো মানুষের। কৃষি জমি থেকে ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের কৃষি জমির চরম ক্ষতি হচ্ছে।

 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার গড়দুয়ারা তুলাতল, পৌরসভার ফটিকা বিল ও মোহাম্মদপুর, ছিপাতলী, নাঙ্গলমোড়া, গুমানমর্দন, মির্জাপুর, চারিয়া, সরকারহাট, কাটিরহাট, মুনিয়া পুকুর, ফরহাদাবাদ, নাজিরহাট, উত্তর ও দক্ষিণ মার্দাশা, শিকারপুর, বুড়িশ্চর এলাকায় কৃষি জমির মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা হলে মাটি কাটা শুরু হয় এবং ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় এসব মাটি।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল মামুন শিকদার বলেন, জমি নিজের বা অন্যের হোক মাটি কাটার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু এই বিষয়ে আইন আছে। জমির উপরিভাগের মাটিতে অর্গানিক যেসব উপাদান থাকে তা কেটে নিয়ে ফেললে জমির ঊর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। ফলে জমিতে বেশি পরিমাণের সারের প্রয়োজন পড়ে চাষাবাদে ও সেইসব জৈব উপাদান পূরণ হতে অনেক বছর সময় লাগে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট