চট্টগ্রাম রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সর্বশেষ:

অপহরণই এখন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের প্রধান ‘ব্যবসা’

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের প্রধান ‘ব্যবসা’ এখন অপহরণ। ধরে নিয়ে গেলেই টাকা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে অস্ত্র তৈরির লোকজন এনে পাহাড়ে তৈরি করছে অস্ত্র। সেসব অস্ত্র দিয়ে অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

 

বর্তমানে অপহরণ বেড়ে গেছে উদ্বেগজনক হারে। এতে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফের ১০ লক্ষাধিক মানুষ। এ কারণে টেকনাফের পাহাড়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান চান স্থানীয় জনসাধারণ। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কিছু লোক টাকার জন্য সন্ত্রাসীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে এসব নিয়ে ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। স্থানীয় যারা এ কাজে জড়িত গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলেই অপহরণ অনেকাংশে বন্ধ হবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।

 

টেকনাফ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে কেউ মুক্তিপণ না দিয়ে ছাড়া পাননি। পাহাড়ে রোহিঙ্গা, স্থানীয়সহ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত অপহরণ, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র তৈরি, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফর পাহাড়ি অঞ্চলে। গতবছরের ২৮ এপ্রিল শিশু মো. সাইফ (৯) দু’দিন পর পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পায়। পরে ২১ আগস্ট টেকনাফ মোচনী গ্রামের দুদু মিয়ার দুই ছেলে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পান।

 

একইভাবে ২৫ সেপ্টেম্বর হ্নীলার মোচনী এলাকায় মোহাম্মদ আতিক পাঁচদিন পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পেয়েছিলেন। একই বছরের ১৬ অক্টোবর টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে কৃষক নুরু চারদিন পর তিন লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পান। বাহারছড়া থেকে অপহৃত বেলাল উদ্দিন (৩২) পাঁচদিন পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণে দিয়ে উদ্ধার হন। ২ নভেম্বর নয়জন সাত লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পান। ৩০ নভেম্বর শামলাপুর বাহারছড়া ঢালায় অপহৃত তিন শ্রমিক তিন লাখ টাকায় ছাড়া পান।

 

গত ৫ ডিসেম্বর হোয়াইক্যংয়ের জাকির হোসেন ও মোহাম্মদ জহির তিন লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পান। একসাথে অপহৃত ১৮ জন চার লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পান। জসিমসহ নয়জন অপহরণের পর ৩৭ লাখ টাকা মুক্তিপণে ছাড়া পান। ফজরের নামাজে যাওয়ার সময় শাকের আহমদ (৬০) নামে এক প্রবাসীকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। পরে প্রশাসনের অভিযানের মুখে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

 

বাহারছড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ উল্লাহ বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে অবস্থান করে বিভিন্নভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে মুক্তিপণ নিচ্ছে, কাউকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র রয়েছে।

 

সাইফুল ইসলাম নামে এক অপহৃতের বাবা জহুর আলম বলেন, আমার ছেলের মুঠোফোন থেকে ফোন করে মারধর করে করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা কোথায় পাবো বললেই ছেলেকে আরও বেশি মারধর ও নির্যাতন করে। ‘র‌্যাব, পুলিশ নিয়ে ঝামেলা করলে তোমার ছেলে লাশ হবে’ বলে হুমকি দিয়ে থাকে।

 

পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপহরণের শিকার হয়েছেন রোহিঙ্গাসহ অন্তত ৩০০ জন। এর মধ্যে মুক্তিপণ দিতে না পেরে ৩৪ জনকে মেরে ফেলা হয়। তারা টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে অপহরণ হয়েছিলেন।

 

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫০ জনের অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯১ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯ জন রোহিঙ্গা। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবারসূত্রে জানা গেছে। এক বছরে টেকনাফ মডেল থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ১৯টি, অপহরণের শিকার ৬২ জন, উদ্ধার হয়েছেন ৬০ জন, গ্রেপ্তার হয় ২৯ জন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট