চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রচার-গণসংযোগে ঈদ কাটান আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৭ এপ্রিল, ২০২৪ | ১২:১১ অপরাহ্ণ

গত শনিবার বোয়ালখালীর কধুরখীল গ্রামে মায়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রবাসী ব্যবসায়ী উজ্জ্বল দত্ত। প্রায় ৪ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন ছিল। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও মুসলমানদেরও বড় অংশগ্রহণ ছিল ওই অনুষ্ঠানে।

 

উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীরা। দুপুরের পর থেকে একে একে হাজির হন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে আসা মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময়, গণসংযোগ ও দোয়া চেয়ে ব্যস্ত সময় কাটান তারা। দেখা যায়, দুপুর তিনটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল হক, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এস এম সেলিম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আকতার, মোহাম্মদ শফিক একসঙ্গে মিলিত হন।

 

হেভিওয়েট ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩-৪ ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠানে ঘুরে ঘুরে আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও নিজেদের প্রার্থিতার পরিচয় দিয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটান। এভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এখন ছুটে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ঘরানার চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না তারা।

 

পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদ উৎসব ছিল প্রার্থীদের জন্য সোনায় সোহাগা। রমজান মাসজুড়ে ইফতার মাহফিল ও দান-খয়রাতে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন প্রার্থীরা। অনেকেই গরু জবেহ করে রোজায় গরিবদের বিলি করেছেন। অনেকেই বিরিয়ানি রান্না করে বিলি করেছেন। ঈদের দিন অনেক প্রার্থী সেমাই-মিষ্টান্ন ছাড়াও গরু জবেহ করে মেজবানি বা মাংস পরোটা-বাকরখানি দিয়ে নেতাকর্মী, স্বজন ও এলাকাবাসীকে আপ্যায়ন করিয়েছেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে ছুটে যান।

 

ঈদ ও রোজায় ব্যস্ত সময় কাটান সম্ভাব্য চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, পটিয়া, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঈদ এবং নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বড় বড় বিলবোর্ড ও পোস্টার লাগিয়ে দোয়া চাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জনসমাগম ও জনবহুল স্থান এবং মোড়ে মোড়ে সাঁটিয়েছেন এসব পোস্টার-ব্যানার।

 

বোয়ালখালী উপজেলার আনাচে-কানাচে পোস্টার-ব্যানার ও বিলবোর্ড লাগিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহেদুল হক, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এসএস সেলিম, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম ও গাউসিয়া কমিটির মোহাম্মদ শফিক।

 

পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন তিনি। এবার তার ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ জোরেসোরে মাঠে নেমে পড়েছেন। রোজা ও ঈদের নানা আয়োজনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের প্রদীপ দাশ, চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম ও যুবলীগ নেতা দিদারুল আলমও ঈদে নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান।

 

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আনোয়ারায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মোড় নেয়। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানকে ঘিরে দুটি বলয় মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়। ওয়াসিকা অর্থ প্রতিমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার পর তার অনুসারীরা শক্ত অবস্থান নেন। দুই পক্ষের তিন নেতা উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে জোরেসোরে মাঠে নেমে পড়েছেন। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী ও প্রখ্যাত শিশু চিকিৎসক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ ঈদ শুভেচ্ছার আড়ালে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন।

 

বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল তীব্র। বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনকে ঘিরে তিন ধারায় বিভক্ত। বর্তমান সংসদ সদস্যের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত মোজাম্মেল হক সিকদার ও সাবেক সংসদ সদস্যের ঘনিষ্টজন খোরশেদ আলম চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। এছাড়াও আরও তিন-চার জন পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন।

 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরই শুরু হয় উপজেলা নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরগরম হয়ে উঠেছে ভোটের রাজনীতি। রোজা ও ঈদকে ঘিরে রীতিমতো ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। নেতা-কর্মীদের নিয়ে ইফতার মাহফিল ও ঈদবস্ত্র বিতরণে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন।

 

গত ১৫ এপ্রিল প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। এই ধাপে জেলার মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে ২১ মে। দ্বিতীয় ধাপে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে এবং শেষ ধাপে ৫ জুন নির্বাচন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসি।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট