চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪

৫৭৭ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে নানা প্রশ্ন

সুমন শাহ, আনোয়ারা

২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ২:১৯ অপরাহ্ণ

১৯৯১ সালের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আনোয়ারাবাসী এক প্রকার অরক্ষিত ছিল। প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে উপজেলার রায়পুর, জুঁইদণ্ডী, বারশত, বারখাইন, বরুমছড়া, হাইলধর, পরৈকোড়া ও চাতরী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করতো। শত শত উপকূলবাসীর বসতঘর, দোকানপাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, ফসলি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও উপকূলবাসীর জন্য হয়নি সুরক্ষিত বেড়িবাঁধ।

২০১৬ সালে আনোয়ারার উপকূলীয় ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তারপরও সুরক্ষিত হয়নি রায়পুর ইউনিয়নের উপকূল। এখনো ৫ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় টেকসই বাঁধ না হওয়ায় আতঙ্কে বসবাস করছেন ৩০ হাজার মানুষ।

 

সরেজমিনে উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাইন্নার দিঘি, ফকির হাট, বার আউলিয়া, উত্তর গহিরা, দক্ষিণ গহিরা, মধ্যম গহিরা, পরুয়াপাড়া ফুলতলী এলাকাসহ উপকূলজুড়ে চলছে বেড়িবাঁধ ও ব্লক নির্মাণের কাজ। তবে পূর্বগহিরা ঘাটকুল ও সরেঙ্গা এলাকায় এখনো ব্লক বসানো হয়নি। এতে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত রয়ে গেছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আনোয়ারা উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এতে রায়পুর ইউনিয়নের ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ব্লক বসানো হয়। বাকি ৫ কিলোমিটার এলাকায় মাটির কাজ শেষ হলেও ব্লক বসানো হয়নি।

 

৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পের শুরু থেকে কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল এলাকাবাসী। এই অভিযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভাও করা হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে প্রকল্পে বড় দুর্নীতি হয়েছে। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপ-ঠিকাদারির ভাগ বাটোয়ারার কারণে কাজের মান নিয়ে নানা অভিযোগ এলাকাবাসীর। গত ২৩ মার্চ রায়পুর এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে যান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। এসময় এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনেই বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন।

 

স্থানীয় ঘাটকূল এলাকার বাসিন্দা আবদুস সবুর বলেন, বাঁধ নির্মাণ হলেও আমাদের বাড়িঘরের পাশে এখনো ব্লক বসানো হয়নি। তাই ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পেলেই বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে হয়। সরেঙ্গা এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, শঙ্খ নদীর দক্ষিণ সরেঙ্গা এলাকা এখনো অরক্ষিত।

 

এদিকে, জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের রব্বাত মিয়াজির বাড়ি থেকে হাজিবাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধসহ ফসলি জমি তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে। মাঝির ঘাট থেকে পূর্ব জুঁইদ-ী ঘাট ও পেঠান মাঝির বাড়ি এলাকার দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি ও ফলসি জমিসহ বানুর হাট থেকে গোদারপাড় এলাকায় বসতঘর ও বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারাচ্ছে শত শত মানুষ। বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ সংস্কার না হলে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হবে পুরো জুঁইদ-ী ইউনিয়ন। এমনটা ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, পূর্বগহিরা, ঘাটকূল ও সরেঙ্গা এলাকার কিছু অংশে মাটির কাজ হলেও টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি। এসব এলাকায় ব্লক বসানো না হলে আবারো প্লাবিত হবে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (আনোয়ারার দায়িত্বপ্রাপ্ত) মিজানুল হক বলেন, রায়পুর ইউনিয়নের ৫১৭৫ মিটার বেড়িবাঁধের জন্য নতুন করে ৩৯৯ কোটি টাকার প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

 

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে আনোয়ারায় নিহত হয়েছিল ১০ হাজারের অধিক মানুষ। এখনো সাগর ও সাঙ্গু উপকূলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপকূলবাসী।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট