সিলেটের দুই কিশোরীকে গার্মেন্টসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কক্সবাজারে নিয়ে হোটেলে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন ও অনৈতিক কাজ করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ দিন আটকে থাকার পর বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ওই দুই কিশোরী কক্সবাজার থেকে পালিয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় এসে পুলিশের কাছে এ ঘটনা জানায়।
বর্তমানে দুই কিশোরীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী দুই কিশোরীর ভাষ্য, নাটক দেখার সুবাদে প্রতিবেশি শাহনাজ বেগমের বাসায় যাতায়াত ছিল তাদের। গত ৮ এপ্রিল শাহনাজ বেগম নামের ওই প্রতিবেশী নারী তাদের দুজনকে পোশাক কারখানায় চাকরির কথা বলে সিলেট থেকে কক্সবাজারে তার ছেলের কাছে পাঠায়। এরপর সে তাদেরকে কৌশলে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে।
পরদিন জ্ঞান ফিরলে ওই দুই তরুণী নিজেদেরকে আবাসিক হোটেলের রুমে দেখতে পায়। এরপর কয়েকটি আবাসিক হোটেল নিয়ে অনৈতিক কাজ করাতো ইমন আহমদ। গত ৯ এপ্রিল রাত থেকে শুরু করে ২৩ এপ্রিল রাত পর্যন্ত তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো হয়। পরে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় আসে তারা।
এর আগে, মেয়েদের খোঁজ না পেয়ে গত ৯ এপ্রিল শাহপরান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন অভিভাবকরা।
দুই কিশোরী জানান, ওই ১৪ দিন তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি। তাদের ফোন হাতে দেওয়া হতো না। দিনের পর দিন হোটেলে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
শাহপরান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল চন্দ্র সরকার জানান, ওই দুই কিশোরীর মা-বাবা তাদেরকে নির্যাতন করত, ঘরে আটকে রাখত। তাই অভিমান করে পূর্ব পরিচিত ওই নারীর ফাঁদে পা দেয়। কাজের জন্য তাদেরকে সেখানে নেওয়া হয়েছিল কি না বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সেখানে তাদেরকে একটি বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তারা সেখান থেকে মুক্ত হয়ে সিলেটে আসে।
শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন জানান, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অভিমান করে দুই বান্ধবী কক্সবাজার পালিয়ে যায়। এরপর তারা দুজনে বৃহস্পতিবার সিলেটে ফিরে আসে। এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা মিসিং ডায়েরি পেয়েছিলাম। সে কারণে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে তাদেরকে বুঝিয়ে ফেরত আসতে বলেন এবং তারা ফিরে আসে। দুজনকেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হোটেলে নিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার বিষয়ে তিনি জানান, এ রকম কোনো কথা তারা আমাদের কাছে বলেনি। এ ছাড়া এমন ঘটনার কোনো অভিযোগও আমরা পাইনি। আমরা যতটুকু জানি, পরিবারের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই বান্ধবী পালিয়েছিল।
পূর্বকোণ/পিআর/পারভেজ