২০১৩ সালে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে চীন থেকে ২০টি ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন কিনে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সাড়ে ছয়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা এসব ডেমু ট্রেনের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। তবে ১০ বছর না যেতেই ২০টি ডেমু ট্রেনের ১৯টিই অচল হয়ে গেছে। এখন চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে কেবল ১টি ডেমু ট্রেন চলাচল করছে।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে এক বছর আগেও ৬টি ডেমু ট্রেন সচল ছিল। এর মধ্যে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগে ২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩টি ও লালমনিরহাট বিভাগে চলত ১টি। তবে গত এক বছরে একে একে বিকল হয়েছে ৫ সেট ডেমু ট্রেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে ১টি বাদে দেশের আর কোথাও কোনো ডেমু ট্রেন চলছে না।
জানা গেছে, কেনার পর নয়টি করে ডেমু ট্রেন চালু করা হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। যদিও ঢাকার সবক’টিই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে সচল রয়েছে কেবল ১টি ট্রেন, যেটি চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। এর বাইরে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে চালু করা ২টি ডেমু ট্রেনই এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
এর মধ্যে ১টিকে গত বছর দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে সচল করতে সক্ষম হন রেলওয়ের প্রকৌশলীরা। ওই বছরের অক্টোবরে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ট্রেনটি উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। কয়েক মাস চলার পর সে ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৬৫৪ কোটি টাকায় ডেমু ট্রেনগুলো কিনেছিল। চীনের তাঙসান রেলওয়ে ভেহিকল কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে ২০১৩ সালে কেনা এসব ট্রেনের আয়ু ধরা হয়েছিল ২০ বছর। তবে রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও বিশেষায়িত কারখানা না থাকায় এক দশকের মধ্যেই রেলের বহর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ডেমু ট্রেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা বাংলাদেশ রেলওয়ের চুক্তি অনুযায়ী, ট্রেনগুলো সরবরাহের পর ১৯ ধরনের প্রধান যন্ত্রাংশ, ৩৭ ধরনের সাধারণ যন্ত্রাংশ, ১৩৭ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রাংশ ও ৩৭ ধরনের টুলস ও মেরামতকাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দেয়ার কথা। যদিও প্রকল্প কর্মকর্তারা এসব যন্ত্রের সবক’টি ঠিকভাবে বুঝে নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফলে কয়েক বছর চলার পর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে নষ্ট হতে শুরু করে ট্রেনগুলো। বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, কেনার পর ডেমু ট্রেনগুলো দিয়ে প্রায় এক কোটি যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। এতে আয় হয়েছে ২২ কোটি টাকার বেশি। যদিও ট্রেনগুলো মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানিতেই ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি টাকার বেশি।
রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, অচল অবস্থায় পড়ে থাকা ট্রেনগুলোর অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আমরা এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো ট্রেনগুলোর বাস্তব অবস্থা যাচাই করে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাব। এরপর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করে ট্রেনগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করতে সক্ষম হব।
পূর্বকোণ/আরডি