কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে নগরীর কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু এলাকা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক কাম বেড়িবাঁধ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন দীর্ঘ নয় কিলোমিটারের এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ কাজ শেষ করে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি পুরোদমে চালু করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে সেখানে প্রতিদিন পরিবার ও পরিজন নিয়ে ভিড় জমান প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সন্ধ্যার আগেই সেখান থেকে ফিরতে হয় পর্যটকদের।
‘কালুরঘাট-চাক্তাই সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পের ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এখনো বাকি দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ। এরমধ্যে কালুরঘাট অংশে দেড় কিলোমিটার এবং শাহ আমানত সেতু অংশে আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ বাকি রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিন এই দুই কিলোমিটার অংশের কাজ করতে পারেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। অন্যদিকে, সিডিএ’র প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন। প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে মাত্র ১০ মিনিটেই কালুরঘাট থেকে চাক্তাই যাতায়াত করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী কালুরঘাট থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেই থেকে চলমান এই প্রকল্পের একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় বাড়ানো হয় ৪৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের শুরুতেই ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এখন তা বেড়ে ঠেকেছে ২ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।
তবে সিডিএর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই জমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতা, মামলা মোকদ্দমা, অর্থ বরাদ্দসহ নানা সংকটের কারণে পুরোদমে নির্মাণকাজ করা সম্ভব হয়নি। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরীর শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর শহরাংশের তীরঘেঁষে চার লেনের সড়কসহ বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে চাক্তাই, রাজাখালী, বলিরহাট, সাব খাল-২ ও ইস্পাহানি খাল, কল্পলোক এলাকা হয়ে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মাণের কাজ অনেকটা শেষের দিকে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, প্রকল্পের নয় কিলোমিটার সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে সাত কিলোমিটার বাঁধের কাজ এবং সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং এর কাজ শেষ হয়েছে। এবছর জুনে আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৮০ শতাংশের মত কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২৪ ফুট উঁচু ও ৮০ ফুট প্রশস্ত চার লেনের সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। খালের মুখে ১২টি জোয়ার-ভাটা প্রতিরোধক রেগুলেটর ও পাম্পহাউস স্থাপন করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১০টি রেগুলেটর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। যেগুলো এবছরের বর্ষায় চালু রয়েছে। বাকি ২টি রেগুলেটরের নির্মাণ কাজ চলছে।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে রাজীব দাশ বলেন, ২০১৮ সালে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাজ শুরুর পর থেকেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নানা মামলা-মোকদ্দমায় পড়তে হয়েছে। এছাড়া, অর্থ বরাদ্দ, কোভিডসহ নানা কারণে যথাসময়ে নির্মাণকাজ পুরোদমে চালানো যায়নি। তবে বর্তমানে সব জটিলতা কাটিয়ে পুরোদমে প্রকল্পের কাজ চলছে।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত এলাকার দৃশ্য পাল্টে যাবে। অল্প সময়ের মধ্যে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় যাতায়াত করা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যানজটও অনেকাংশে কমবে। সেখানে যেহেতু এখন নিয়মিত পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হয়েছে, তাদের কথা চিন্ত করে সেখান গাছ লাগানো, বসার জন্য বেঞ্চসহ বিনোদনের ব্যবস্থা বাড়ানোর কথা ভাবছি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেওয়া ‘কালুরঘাট-চাক্তাই সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প’ ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে বাস্তবায়নাধীন ‘কালুরঘাট-চাক্তাই সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের’ একপাশে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলছে সিডিএ।
পূর্বকোণ/ইবনুর