প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক দেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। সেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো চট্টগ্রামেও হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। ঈদের আগের দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে নতুন করে ৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জন নগরীর এবং ১ জন উপজেলার বাসিন্দা। এতে আবারও স্বাস্থ্যখাতে বাড়ছে উদ্বেগ। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রামে হাসপাতাল ও ল্যাবগুলোতে জোর প্রস্তুতি চলছে।
চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বুধবার দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় নগরীর দুটি হাসপাতালকে করোনা রোগীর জন্য নির্ধারণ করা হয়। এগুলো হলো: চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মেমন হাসপাতাল-২। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আলাদা করোনা ওয়ার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে চমেক হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তুত নগরীর তিন হাসপাতাল: করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নগরীর তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৫০টি সাধারণ শয্যা ও ১০টি আইসিইউ শয্যা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৫ শয্যার আইসোলেশন ও ৫টি আইসিইউ চালুর চেষ্টা চলছে। মেমন হাসপাতাল-২- এ ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে অন্যান্য সরঞ্জামও।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, আগে করোনা ওয়ার্ড ছিল, পরে তা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল। এখন ফের ৫০ শয্যার সাধারণ এবং ১০ শয্যার আইসিইউসহ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
প্রস্তুত হয়ে গেছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালও। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকরাম হোসেন জানান, ১৫ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, বিপাপ মেশিন, সিরিঞ্জ পাম্পসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া অক্সিজেন সরবরাহের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা ইতিমধ্যে রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন রানা বলেন, চসিক জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। কিট আসার পর রেপিড এন্টিজেন টেস্টও চালু হবে। এছাড়া লালদিঘির পুরাতন কোভিড আইসোলেশন সেন্টারটিকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পুরোনো ল্যাবগুলো আবার চালুর উদ্যোগ: চট্টগ্রামে সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা এখনো চালু না হলেও এই সপ্তাহে চারটি আরটি-পিসিআর ল্যাবও চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)। তবে এই ল্যাবগুলোতে কিট ও রিয়েজেন্ট সংকট এবং জনবল ঘাটতি রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, কোভিডের সময় আমাদের ল্যাবে ৭ জন কর্মী কাজ করতেন। তবে প্রোগ্রামের আওতায় থাকা তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় তারা এখন কাজ করছেন না। এছাড়া কিট ও রিয়েজেন্টের অভাবে পরীক্ষা বন্ধ। এসব বিষয়ে ডিজির (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক) সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত কিট ও রিয়েজেন্ট পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যে তা চালু করা যাবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ৩০০টি আরটি-পিসিআর কিট এবং ৬০০টি রেপিড এন্টিজেন কিট ঢাকা থেকে এসে পৌঁছেছে। এগুলো দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা শুরু হবে শনিবার বা রবিবার থেকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম। পাশাপাশি অন্যান্য ল্যাবেও পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আইসিইউ নিয়ে বড় সংকট, মেরামতের তাগিদ: এদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ কার্যত অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। ১৮টি শয্যার মধ্যে মাত্র একটি ভেন্টিলেটর সচল। মহামারির সময় ১৮টি শয্যা স্থাপন করা হলেও বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি এখন অকেজো। মেরামতের তাগিদ দেয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংক্রমণ বাড়ায় আপাতত পাঁচটি শয্যা সচল করার চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, আইসিইউ চালু করতে পাঁচটি ভেন্টিলেটর সচল করার কাজ চলছে। ঢাকা থেকে প্রকৌশলীরা অকেজো ভেন্টিলেটর সচল করতে দু-একদিনের মধ্যে চট্টগ্রামে আসবেন।
পূর্বকোণ/ইবনুর