চট্টগ্রাম বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

সর্বশেষ:

বয়স বুঝে এখন হয় না উচ্চ রক্তচাপ: গবেষণা
ফাইল ছবি

বয়স বুঝে এখন হয় না উচ্চ রক্তচাপ: গবেষণা

ইমাম হোসাইন রাজু

১৭ মে, ২০২৫ | ১:৩৩ অপরাহ্ণ

নাগরিক জীবনের কর্মব্যস্ততা আর গ্রামে অবহেলা-অসচেতনতার মাঝে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে উঠছে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। গবেষণা ও জরিপের তথ্য অনুযায়ী এই ‘নীরব ঘাতক’ এখন নগর থেকে গ্রাম সর্বত্র দ্রুত বিস্তার ঘটাচ্ছে। মধ্যবয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

 

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং দেশের ২২টি হাসপাতালে পরিচালিত তিনটি গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক আলোচ্য তথ্য। বলা হচ্ছে, চট্টগ্রাম এবং আশপাশের জেলাগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ নীরবে বেড়েই চলেছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা ও মানসিক সমস্যা।

 

সব বয়সেই উচ্চ রক্তচাপ: ২০২১ সালের শেষের দিকে ইউএসটিসির দুই তরুণ গবেষক মো. শাহিদুল ইসলাম ও তাসনুবা জান্নাত শহরের বিভিন্ন এলাকা আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০০ রোগীর ওপর জরিপ চালান। সাত সপ্তাহের সেই জরিপে উঠে আসে, ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগ সবচেয়ে বেশি। অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশই এ বয়সের। ভয়াবহ তথ্য হলো- তরুণদের মধ্যেও এই রোগ ঢুকে পড়ছে। গতবছর চমেক হাসপাতালের হোপ ক্লিনিকের তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৩৬৩ উচ্চ রক্তচাপ রোগীর মধ্যে ১৩ জন ছিলেন ১৫ থেকে ৩০ বছরের তরুণ।

 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, অনেকে মনে করেন উচ্চ রক্তচাপ শুধু বয়স্কদের রোগ; কিন্তু এখন তরুণরাও ঝুঁকিতে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ আর প্রযুক্তিনির্ভর জীবনধারা এটাকে দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

নগর-গ্রামেই সমান তালে, সচেতনতা কম: গবেষণায় উঠে এসেছে, শহরের মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার গ্রামের মানুষের তুলনায় দেড়গুণ। শহরের কর্মব্যস্ততা আর অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস যেমন দায়ী, তেমনি গ্রামে মানুষের অসচেতনতা, নিয়মিত রক্তচাপ না মাপা এবং স্বাস্থ্যসেবা সংকট পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। গ্রামীণ এলাকার ৫২ শতাংশ রোগী নিয়মিত রক্তচাপ মাপেন না। চিকিৎসকের কাছে যাওয়া তো মাসে একবারও হয় না। মাত্র ১০ শতাংশ রোগী নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।

 

বাংলাদেশ হাইপারটেনশন এন্ড হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ এক নীরব ঘাতক। উপসর্গ প্রকাশ না করেই একদিন স্ট্রোক, হার্ট এটাক, কিডনি সমস্যা তৈরি করে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে।

 

বংশগত কারণ, মানসিক চাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা: দেশের ২২টি হাসপাতালে চালানো গবেষণায় দেখা যায়, ৬৮ শতাংশ রোগীর বংশগত ইতিহাস রয়েছে। অনেকে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ ও মানসিক সমস্যার সঙ্গেও ভুগছেন। প্রায় ১৬ শতাংশ রোগী বিষণ্ণতা আর দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. আদনান মান্নান বলেন, ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে বংশগত সম্পর্ক এবং কোন জিন এটি নিয়ন্ত্রণ করে তা খুঁজে বের করাটা খুব জরুরি।

 

সমাধান কোন পথে: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না থেকে জীবনযাপনে শৃঙ্খলা আনতে হবে। সুষম খাবার, নিয়মিত হাঁটা-ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ আর সময়মতো রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে হবে। পাশাপাশি গ্রামের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে হবে।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস আর কর্মব্যস্ততার কারণে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ছে। এখনই সচেতন না হলে এটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট