চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাপড়ের ব্যবসায় চরম মন্দা, শ্রমিক ছাঁটাই

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৭ আগস্ট, ২০২১ | ১:০২ অপরাহ্ণ

বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত দুই বছর ধরে কাপড়ের দোকানে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। বেচাকেনা কমেছে অস্বাভাবিকভাবে। সেই তুলনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খরচ কমেনি। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

খরচ সামলাতে না পেরে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক বড় ব্যবসায়ীও ব্যবসা সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছেন। ব্যবসায় মন্দাভাবের কারণে শুধু ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাই নয়। ছাঁটাইয়ের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন শ্রমিকেরাও। দুরবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। ১৮ মাসে ৪৫ শতাংশ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন বলে জানা যায়। এফবিসিআইয়ের ২০১৮ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, শুধু রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতিতে দেড় লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অন্তত সাড়ে তিন লাখ পাইকারি দোকান রয়েছে। শুধু পোশাকেই এক লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। ঈদ বাজারের লেনদেনের বড় অংশই পোশাক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হয়। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি ছালে আহমদ সুলেমান বলেন, শুধু চট্টগ্রাম শহরে ছোট বড় মিলে প্রায় সাড়ে ৬শ’ শপিংমল ও মার্কেট রয়েছে।

এসব শপিংমলে শুধু কাপড় ব্যবসায়ী আছেন অর্ধেক। এদের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ শ্রমিককে এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হয়েছে। এদের আর কাজে না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে এরমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ঋণের কারণে অনেকে লুকিয়ে আছেন। এ ব্যবসায়ীরা এতোটাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন যে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী চাইলেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। কারণ টানা দুই বছরে ব্যাংক লোন, ক্ষুদ্র ঋণ দাতা সংগঠনের ঋণ, হোল্ডিং ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স, আয়কর ট্যাক্স, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি জমে খারাপ রকমের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এসব জটিলতার কারণে অনেক ব্যবসায়ী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গোডাউনে কাপড়গুলো স্তুপ আকারে পড়ে আছে। কাপড়ের ব্যবসা হচ্ছে মৌসুমি ব্যবসা। পণ্যের মেয়াদ চলে গেছে। এগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে বড় রকমের লোকসান হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ মাহব্বুল আলম বলেন, ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা আগামী ১০ বছরে আর দাঁড়াতে পারবেন না। এ করোনায় লকডাউনের কারণে সবার স্বপ্নই শেষ। রিয়াজউদ্দিন বাজারে পাঁচ হাজারের বেশি কাপড় ব্যবসায়ী আছেন। কাপড় ব্যবসা মৌসুমি ব্যবসা। ২০২০ সালে বিদেশি পোশাক আমদানি করে ধরা খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এগুলো আর বিক্রি হবে না। এখন মার্কেট চলছে দেশীয় তৈরি পোশাক দিয়ে। খুবই অল্প পরিমাণ মূলধন নিয়ে এখন ব্যবসা করছি।
টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, এ দ্ইু বছরে চট্টগ্রামে শুধু কাপড় ব্যবসায়ীদের কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। টেরীবাজারে এখন পর্যন্ত সাতটার বেশি দোকান বন্ধ হয়েছে। ঈদ, পূজা ছাড়াও সারাবছর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। একটা বিয়েতে নিম্নস্তরে ৫০ হাজার টাকার সাজসজ্জার জিনিস থাকে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির বিয়ে হলেতো বিষয়টা আরো অন্যরকম হয়। কিন্তু এ লকডাউনে আমাদের ব্যবসা প্রায় ১৮ মাস বন্ধ রয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে খুললেও আগের সেই বেচা কেনা নেই। এখনকার বিয়েতে দুই-চারজন মিলে বউ নিয়ে আসে।
টেরীবাজারে রাঙ্গুলির মালিক সাইফুল আজম বলেন, দোকান খোলার পর থেকে বসে আছি। এ দুইদিন ২০-৫০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করার অবস্থা নেই। ২২ জন ছিল আমার দোকানে কর্মকর্তা-কর্মচারী। এখন ১২ জন আছে। আমি পারছি না। তাই অস্থায়ীভাবে তাদের ছাঁটাই করেছি। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সবগুলো শপিংমলেই অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি পোষাতে এবছর বিভিন্ন মাধ্যম থেকে টাকা ধার করে পুনরায় বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আবারও লকডাউনের কারণে এখন মূলধন হারানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট