চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় থেমে গেল হৃদয়ের বড় হওয়ার স্বপ্ন

রাজীব রাহুল

১২ জুলাই, ২০২১ | ৬:৪৭ অপরাহ্ণ

আর কখনো স্কুলে যাবে না হৃদয়। দেখা হবে নাএসে  সেসব সহপাঠীদের সাথে। যাদের সাথে করতো মাখামাখি হই-হুল্লো। করোনার ঝড়ে লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া হৃদয়ের বড় হওয়ার স্বপ্ন। করোনায় বাবার অসুস্থতা ও আর্থিক দৈন্যতার কবলে পড়ে বারো বছর বয়সেই কাঁধে চেপেছে মা বাবা ও দুই বোনের ভরণ পোষণের দায়িত্ব। একদিন সব স্বাভাবিক হবে। আবারও দল বেঁধে স্কুলে যাবে সহপাঠীরা। কিন্ত স্কুলের করিডোরেও আরকোনদিন পা পড়বে না হৃদয়ের। অথচ পড়ালেখা শিখে দিনমজুর পিতার কষ্ট ও গ্লানির জীবনে আনন্দ অশ্রু দেখতে চেয়েছিল সে। তা আর হলো কই, ভাড়া করা ভ্যানে নগরীর ফলমন্ডি থেকে মৌসুমী ফল এনে বনে গেল ভাসমান হকার।

শুধুই কি হকার, এই মাস তিনেকের বাস্তবতা মানসিক দিক থেকে তাকে তৈরি করছে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে। আত্মসম্মানের কারণে হোটেল বয়ের কাজ করতে না চাইলেও সড়কের ভাসমান হাকার হিসেবে নির্মমতা থেকেও রেহায় পায়নি সে। টহল পুলিশের বেতের আঘাত ও স্থানীয় রাজনৈতিক চাঁদাবাজদের দৈনিক চাঁদা দিতে না চাইলেই জুটে চড় থাপ্পর। দিনশেষে ভ্যানভাড়া , চাঁদা ও নিজের খাবারের টাকা পরিশোধ করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে হৃদয়ের সংসার। নিজে পড়তে না পারলেও ছোট দুই বোনকে পড়ানোর স্বপ্ন দেখে সে। তাদের চোখ দিয়ে দেখতে চায় তার রঙ্গিন স্বপ্নগুলো।

নগরীর আতুরার ডিপোর আমিন জুটমিল এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার পরিজন নিয়ে থাকে হৃদয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা বাচ্চু মিয়া ছয়মাস যাবত অসুস্থ। এই ছয়মাসে বাবার অসুস্থতার খরচ যোগাতে খেয়ে না খেয়ে দিন গেছে তাদের। মাসখানেক আগেই পড়ার বইগুলো কেজি ধরে বিক্রি করে দিয়েছে কাগজ বিক্রেতার কাছে। সেই টাকার সাথে কিছু ধার করা টাকায় নেমেছে অল্প পুজির ফল ব্যবসায়। নিজের একটা ভ্যান থাকলে দৈনিক ভ্যান ভাড়ার টাকাটা বেচেঁ যেতো তার। এই কয়েকদিনে বুঝে গেছে মৌসুমী ফলের ব্যবসা তাকে দিয়ে হবে না। কারণ ফলমন্ডি থেকে কেনা ফলের খাঁচিতে প্রায়ই পঁচা পড়ে । সেদিন ইনকামের চেয়ে লসের পরিমাণ বেশি হয়। তাই প্রতিদিন দুপুরে না খেয়ে টাকা জমাচ্ছে হৃদয় যে টাকায় একটা ভ্যান কিনে তাতে কাপড় বিক্রি করবে সে। কিন্তু কত মাস আর কত বছরে ভ্যান ও কাপড়ের বিশ হাজার টাকা জোগাড় হবে তার ?

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট