চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

৪০ বছর পর প্রত্যাশিত সম্মান

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

৩০ জুন, ২০২১ | ৩:৪৮ অপরাহ্ণ

যেদিন বউ হয়ে আসেন তার পরদিন থেকেই বৃক্ষপ্রেমী রুজিনা জড়িয়ে পড়েন নার্সারির সাথে। এ শুধু নার্সারি নয়, রুজিনা-জসিমের ভালোবাসার জায়গাও। বিয়ের পর দীর্ঘ তিন দশক ধরে স্বামীর সংসারের পাশাপাশি রুজিনা ইয়াসমিনের আপন হয়ে উঠেছে নার্সারিরটাও।

এ সময় স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মতই সমান পরিচর্যা করতেন নার্সারির। কারণ এটিই ছিল তাদের আয়ের একমাত্র উৎস।  ১৯৮০ সালে জসিমের বাবা সরকারি কর্মকর্তা নাদেরুজামান শখের বশে নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে জসিম নার্সারির হাল ধরেন। ৩০ বছর ধরে স্ত্রীর সহযোগিতায় চালিয়ে যাচ্ছেন নার্সারিটি। ৩০ বছর পর ‘ফতেয়াবাদ নার্সারি’ নামের সেই নার্সারিটি বয়ে এনেছে রাষ্ট্রীয় সম্মান। স্ত্রী রুজিনা ইয়াসমিন ২০২১ সালে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৯ পেয়েছেন।

‘ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারি’ ক্যাটাগরিতে তিনি দ্বিতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। জসিম- রুজিনার নার্সারিতে রয়েছে প্রায় ৩শ’ জাতের এক হাজার প্রজাতির ফলদ, বনজ, ওষধি, ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধনের পাতাবাহার গাছ। শখের বসে ৪১ বছর আগে মাত্র ১২ হাজার টাকায় দুই একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা নার্সারিটির আয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে প্রায় দুই কোটি টাকায়। বর্তমানে নার্সারির পরিধি ১০ একর।

ফতেয়াবাদ নার্সারিটি শুধু রুজিনা-জসিমেরই আয়ের একমাত্র উৎস নয়, বর্তমানে এ নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে আরো ৬০ জন মানুষের। তারাও এখানের আয় দিয়ে সংসার চালায় । রুজিনা ইয়াসমিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি গাছ পছন্দ করতাম। বিয়ের পরে স্বামীর নার্সারির দেখে খুশিই হই। স্বামীর আয়ের একমাত্র উৎস নার্সারি পরিচালনায় নিজেও যুক্ত হই। পুরষ্কারের আশায় কিছুই করিনি। ভালবেসে নার্সারি ব্যবসা চালিয়েছি এবং তার পুরস্কারও পেয়েছি। পুরস্কার পেলে ভাল লাগে। কাজে উৎসাহ বাড়ে।

কথা হয় রুজিনা ইয়াছমিনের স্বামী মোহাম্মদ জসিমের সাথে। তিনি বলেন, বাবা অসুস্থ হওয়ার পর নার্সারিটি চালিয়ে আসছি। পরে স্ত্রীও আমার সঙ্গে যুক্ত হন। নার্সারিতে বর্তমানে ৬০ জন নারী- পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ভরণপোষণের জন্যই নার্সারি ব্যবসা শুরু করি, পুরষ্কারের আশায় নয়। তবে এতদিন পর যেহেতু পুরষ্কার পেয়েছি তাই খুশি লাগছে। মোহাম্মদ জসিম আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের বেচাবিক্রি ভালো হয়। আমরা প্রতিমাসে প্রায় ৯-১০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করি। তবে বর্ষার তিন মাসে বিক্রি আরো বাড়ে। সবমিলিয়ে বছরে প্রায় দুই কোটি  টাকার গাছ বিক্রি হয়। পাইকারি দামে বিভিন্ন নার্সারির মালিকরাও এখান থেকে চারা কিনে নেয়। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখান থেকে চারা ও গাছ সংগ্রহ করে।

কথা হয় বাগানের মালি কুলছুমা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, প্রায় ২৫ বছর এ নার্সারিতে কাজ করছি। এর আগে আমার মা এখানে কাজ করেছেন। এখানে চাকরি করে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি আমি। প্রতিদিন ৩শ টাকা করে আয় হয়। এই আয়েই চলে আমার তিন সদস্যের সংসার।

একইভাবে প্রায় ২৪ বছর বয়সের বাবাহারা ঝর্ণারও কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। প্রতিদিন ১৯০ টাকা আয় হয় তার। এ দিয়েই চলে ঝর্ণা ও তার মায়ের সংসার।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট