চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নতুন বিপাকে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স

ইমাম হোসাইন রাজু

২৪ জুন, ২০২১ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

বহু প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের কাজে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। কোথায় সাময়িকভাবে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হবে, সেই স্থান নির্ধারণে সহায়তা চেয়ে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন নির্মাতা কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত বিভাগ।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রথমে বিভাগীয় কমিশনার এবং পরে সর্বশেষ চট্টগ্রামের সিটি মেয়রের দ্বারস্থ হয়েছেন। একটি সার্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য সমাধান পেলেই চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের কাজ দ্রুত সারতে চায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এদিকে, শহীদ মিনার স্থানান্তর নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংস্কৃতিপ্রেমীদের মধ্যে চলছে তীব্র সমালোচনা। যদিও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে কিছু সময়ের জন্য তারা এটি সরাতে চান। কাজ শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে একই আদলে একইস্থানে দৃষ্টিনন্দনভাবে শহীদ মিনারটি স্থাপন করা হবে। এতে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সসহ শহীদ মিনার ও মুসলিম ইনস্টিটিউট হল এলাকা আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠবে। গতিও ফিরবে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০১৭ সালের নভেম্বরে একনেকে পাস হয় চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স বা সাংস্কৃতিক বলয় প্রকল্প। ২৩২ কোটি ৫২ লাখ টাকার এ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার কাজ চলমান আছে। যেখানে মুসলিম ইনস্টিটিউট ভেঙে ফেলে মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি গ্রন্থগার, আট তলা বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, একটি মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ করা হবে। বিপরীত পাশে নির্মাণ করা হবে পাবলিক প্লাজা ও নতুন শহীদ মিনার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের এক পাশের কাজ চলমান রয়েছে। তবে বিপরীত পাশের অর্থাৎ শহীদ মিনারের অংশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় কাজই শুরু করতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সাময়িক সময়ের জন্য শহীদ মিনারকে সরিয়ে নিতে এবং অন্যত্র অস্থায়ীভাবে নতুন শহীদ মিনার স্থাপনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রের দ্বারস্থ হয়েছেন। এর আগেও এ কাজের ব্যাপারে সহায়তা চাওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের।
গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ পূর্বকোণকে বলেন, ‘সকল মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের স্থান হচ্ছে শহীদ মিনার। যেহেতু বৃহৎ ও দৃষ্টিনন্দন একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ চলমান। তাই এ কাজের সুবিধার জন্য সাময়িকভাবে শহীদ মিনারটি সরানো প্রয়োজন। এজন্য আমরা মেয়র ও বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তাদের সহায়তা চেয়েছি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নতূন নকশা অনুযায়ী মূল সড়কের ওপর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের যাতায়াতের জন্য টানেলের মতো ওভারপাস তৈরি করা হবে। যা মুসলিম হল থেকে বর্তমান শহীদ মিনারের সাথে সংযুক্ত থাকবে। শহীদ মিনারের পূর্বপাশে থাকবে উন্মুক্ত মঞ্চ ও গ্যালারি। যেখানে ব্যবস্থা থাকবে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক আয়োজনসহ সভা-সেমিনারের মতো অনুষ্ঠানের। পাশাপাশি শহীদ মিনারের পশ্চিম পাশে থাকবে ক্যাফেটেরিয়া বা ফুড জোন এবং মিউজিয়াম।
নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ আরও বলেন, ‘বর্তমানে শহীদ মিনারটি যেভাবে আছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও একই আদলে থাকবে। তবে কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত মানুষ যেন শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন, সেজন্য সাময়িকভাবে অন্যস্থানে অস্থায়ী একটি শহীদ মিনার আমরা তৈরি করে দিতে চাই। সে স্থান কোথায় হবে, তা সকলের পরামর্শে নির্ধারণ করা হবে।’
সিটি মেয়রের সহায়তা কামনা : সাংস্কৃতিক বলয় প্রকল্পে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে শহীদ মিনার অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য স্থান নির্ধারণের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ গত মঙ্গলবার সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করেন। কর্মকর্তাদের সহায়তা চাওয়ার জবাবে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শহীদ মিনার ও মুসলিম ইনস্টিটিউট হলকে ঘিরে প্রত্যাশিত একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প বলয় বাস্তবায়নের চলমান প্রক্রিয়ায় পূর্বের মূল অবকাঠামো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এখানে শহীদ মিনারের বর্তমান অবস্থানটিও পড়ে। এই শহীদ মিনারকে ঘিরেই চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বলয়ের মূল প্রেরণা। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থেই শহীদ মিনারকে আপাতত কোথায় স্থানান্তর করা হবে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক, সুধী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে, শহীদ মিনার স্থানান্তরের খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মধ্যে চলছে তীব্র সমালোচনা। যেখানে ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অন্যত্র সরানোর চক্রান্ত রুখে দাঁড়াও’ ‘ষড়যন্ত্র রুখে দিতে চট্টগ্রামবাসী প্রস্তুত, পাশাপাশি শহীদমিনার সংলগ্ন একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের’ জোর দাবিও তোলেন কেউ কেউ।
যদিও আবার কেউ কেউ আলোচ্য বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়কে গণ-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার দাবিও জানান। না হয় এ নিয়ে বড় ধরণের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট