চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম কারাগার

নাজিম মুহাম্মদ 

২১ এপ্রিল, ২০২১ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

ধারণ ক্ষমতার তিনগুন বেশী বন্দী নিয়ে করোনা মহামারিতে কঠিন সময় পার করছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। যদিও বন্দীদের করোনামুক্ত রাখতে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৭ এপ্রিল কামরুজ্জামান নামে একজন হাজতী করোনায় মারা যাবার পর বন্দীদের মধ্যে করোনা ভীতি বেড়েছে। এরই মধ্যে কারাগারের দুইজন ডেপুটি জেলার, একজন নার্স আরো একজন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন কর্তৃপক্ষ। এ খবরে আতঙ্ক ভর করেছে হাজতী ও তাদের স্বজনদের মাঝে। এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেখানে প্রতি ওয়ার্ডে অতিরিক্ত হাজতি থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই কঠিন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম  কেন্দ্রিয় কারগারের ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার ২৪৯জন। গতকাল মঙ্গলবার কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিলো  ৭ হাজার ১’শ জন। যা ধারণ ক্ষমতার তিনগুণেরও বেশী। মাঝে মাঝে বন্দীর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৯ হাজার।  গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনার সংক্রমণ ঠেকিয়ে বন্দীদের নিরাপদ রাখতে কারাগার কর্তৃপক্ষ কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন,সে বিষয়ে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, করোনায় বন্দীদের নিরাপদ রাখতে আমরা পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। নিয়েছি নানা উদ্যোগ। সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে ১৩৫টি ওয়ার্ড রয়েছে।

প্রতিটি ওয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৪০ জন করে। করোনা প্রতিরোধে বন্দীদের নিরাপদে রাখতে একটি ভবনের ২৪টি ওয়ার্ডকে  আমরা কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ড হিসাবে তৈরি রেখেছি। প্রতিদিন  আসা নতুন বন্দীদের প্রথমে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। এরপর তাদের হাত ধোয়ার পর স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করা হয়।  কারাভ্যন্তরে প্রবেশের প্রথম ১৪দিন নতুন বন্দীদের কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরবর্তীতে তাদের সাধারনণ ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এছাড়া কারাগারের অভ্যন্তরে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে ভেতরে প্রবেশের আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সকল বন্দী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাস্ক পরাও নিশ্চিত করা হয়।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান, চট্টগ্রাম কারাগারে প্রতিদিন ৩২ থেকে ৩৬ জন নতুন বন্দী যুক্ত হন। গতকাল মঙ্গলবার বন্দীর সংখ্যা ছিলো ৭ হাজার ১শ জন।

সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল বলেন,  আমাদের চারজন কর্মকর্তা কারোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা এখন সুস্থ হওয়ার পথে। তাদেরকেও কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কামরুজ্জামান নামে যে হাজতী মারা গেছেন তিনি কারাগারের ওয়ার্ডে  নয় – চিকিৎসাধীন আবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা  গেছেন।

স্বাস্থ্যসুরক্ষামূলক ব্যবস্থার মধ্যেও কামরুজ্জামানের আক্রান্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলার তারিকুল জানান, গত ২৩  ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কামরুজ্জামান বন্দী ছিলেন। ২০১৬ সালের বন্দর থানার একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তারের পর কামরুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো হয়। কামরুজ্জামান শারিরীকভাবে দুর্বল ছিলেন। পাশাপাশি  যক্ষা  রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত ১০ এপ্রিল হালকা জ্বর আসায় তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। জ্বর না কমায় পরে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়।  ১৬ এপ্রিল ‘পজেটিভ’ আসার পরদিন সকালে  (১৭ এপ্রিল) তিনি মারা যান।

তিনি জানান, কামরুজ্জামানকে যখন হাসপাতালে পাঠানো হয়, তখন জ্বর ছাড়া অন্য উপসর্গ ছিল না। চিকিৎসকও মৃত্যু সনদে যক্ষা রোগের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই হাজতি  কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা এই কারা কর্মকর্তার। কামরুজ্জামান কারাগারের যে ওয়ার্ডে ছিলেন, সেখানে অন্যদের বিষয়ে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট