চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

মহামারীতে ম্লান বাঙালির উৎসব

মিজানুর রহমান  

১৪ এপ্রিল, ২০২১ | ১:০৭ অপরাহ্ণ

পহেলা বৈশাখ মানেই গায়ে রঙিন পোশাক। মুখে রং তুলিতে আঁকা আলপনা। খোঁপায় গাঁদা ফুল। শহরজুড়ে গলির মোড়ে মোড়ে উৎসবের আমেজ। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা ধনী, গরিব ভেদাভেদ ভুলে বাঙালি হয়ে উৎসবে মেতে উঠা। নাচ, গান, কবিতা, বর্ণিল শোভাযাত্রায় বাংলা নববর্ষকে বরণ।

তবে মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছর ‘ঘরবন্দী’ থেকেই উদযাপন করতে হবে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। তাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রাণকেন্দ্র ডিসি হিল, শিরীষতলা, চারুকলা কিংবা শিল্পকলা- কোথাও নেই উৎসব উদযাপনের কোনো আয়োজন।

এ কারণে এবার পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মার্কেটে রঙিন জামা কিনতে ভিড় নেই। পান্তা-ইলিশ জোগাড়ের তোড়জোড় নেই। নানা স্বাদের মুড়ি-মুড়কি আর পিঠা-পুলি তৈরির ব্যস্ততা নেই। পুতুল নাচ দেখিয়ে, নগরদোলায় চড়িয়ে টাকা আয়ের লক্ষ্য নেই। একসাথে দাঁড়িয়ে কণ্ঠ মিলিয়ে নতুন বছরের আবাহনে ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে আনন্দে মেতে উঠার সুযোগও নেই।

বাংলা বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে ডিসি হিলে প্রতিবছর দুই দিনের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন থাকে। মহামারীর কারণে গত বছর সেই আয়োজনে ছেদ পড়ে। এবারও কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। তাই নববর্ষের দিন ভোরে ওস্তাদ স্বর্ণময় চক্রবর্তীর রাগসংগীত কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর চিরায়ত বাংলা গান, একক ও দলীয় পরিবেশনা উপভোগ করা যাবে না। বৈশাখী মেলাও বসবে না।

ডিসি হিলে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আহমেদ ইকবাল হায়দার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, মহামারীর কারণে গত বছর কোনো আয়োজন করতে না পারায় অসহায়ত্ব বোধ করেছিলাম। এবার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা ছিলো। সেভাবেই আমরা কাজ এগিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন অনুষ্ঠান করা উচিত হবে না। এখানে ইমোশন দেখিয়ে লাভ নেই।

তিনি বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান না হলেও সংস্কৃতি কি আর পিছিয়ে থাকবে? সংস্কৃতিকে আমাদের লালন করতে হবে। আর বিকল্প যেটা বলা হচ্ছে- অনলাইন। সেটা আমরা করতে চাই না। মানুষে মানুষে মিলন না হলে উৎসব হয় না। আমি যদি বাতাস না পাই, গাছ না দেখি, পাখির ডাক না শুনি, ঘরে বসে অনুষ্ঠান করে লাভ নেই। এ কারণে আমরা প্রোগ্রাম স্থগিত করেছি।  নৈসর্গিক সৌন্দর্যে অপরূপ সিআরবির শিরীষতলায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষে মানুষের ঢল নামে।

নগরদোলা, পুতুল নাচ, শাহাবুদ্দীনের বলি খেলা শিরীষতলার বর্ষবরণকে ভিন্নমাত্রা দেয়। মহামারীর কারণে এবার শিরীষতলার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে প্রেমিকার খোঁপায় ফুল গুঁজে দেওয়া, বাসন্তি রঙের শাড়ি আর রঙিন পাঞ্জাবি পরা যুগলদের হাঁটার দৃশ্য দেখা যাবে না এবার। নেই কোনো আয়োজন।

শিরীষতলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য প্রদীপ দেওয়ানজী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, মহামারীর কারণে শিরীষতলায় কোনো অনুষ্ঠান করছি না আমরা। তবে অনলাইনে দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠান করবো। শিল্পীরা গান, কবিতা, নাচের একক ও দলীয় পরিবেশনা দিয়ে মহামারীর কারণে ‘ঘরবন্দী’ মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

তিনি আরো বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকেন- বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় অনুষ্ঠানের ক্ষণ কবে আসবে। মহামারীর কারণে গতবার ও এবার কোনো আয়োজন না থাকায় সবার মন খারাপ। কিন্তু কিছু করার নেই। আমরা আশা করছি- এ আঁধার কেটে যাবে। আগামী বছর থেকে পুরো দেশ ফের উৎসবে মেতে উঠবে। বাঙালির প্রাণের এই উৎসবে সবাই অংশ নেবেন।

রং-বেরঙের মুখোশ, লোকশিল্পের নানা ধরনের খেলনা, ঘোড়া, নকশিপাখা, ফুল, প্রজাপতি দিয়ে সাজানো মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে নতুন বছর শুরু করেন বাঙালিরা। নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বড় এই আয়োজন এবার বন্ধ থাকবে। মহামারীর কারণে সড়কজুড়ে আলপনা আঁকবেন না চারু      শিল্পীরা।

সংস্কৃতিপ্রেমীদের তীর্থস্থান চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি। নববর্ষ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তবে মহামারীর কারণে এবার অনলাইনেই এসব আয়োজন সীমাবদ্ধ থাকবে বলে দৈনিক পূর্বকোণকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট