আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে আটকে পড়া কয়লাবাহী দুই জাহাজ। জাহাজের কারণে স্রোতের গতিপথ বদলে গেছে। ছিঁড়ে গেছে বালিভর্তি জিও ব্যাগ। এই অবস্থায় শত বছরের পুরনো মসজিদ, কবরস্থান, এতিমখানা ও বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে। বর্তমানে গহিরা সমুদ্র উপকূলের এক কিলোমিটারেরও বেশি এলাকার বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনরোধে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মসজিদ ও কবরস্থান সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাহাজ দুটি মসজিদ ঘেঁষা কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জাহাজের সৃষ্ট ঢেউয়ে ইতোমধ্যে মসজিদের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের জিও ব্যাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতবছর পুরোনো কবর থেকে উঠে এসেছে কঙ্কাল। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। এছাড়াও
বেড়িবাঁধের বেশি অংশজুড়ে পাথরের ব্লক নেই। কিছু কিছু অংশে ভাঙ্গন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ও টিউব দিয়ে ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মসজিদের অস্থায়ী বাঁধ ঘেঁষে জাহাজ আটকে যাওয়ায় সাগরের মোহনায় সৃষ্ট ঢেউ জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে ঘূর্ণায়মান স্রোত তৈরি করছে। এতে দ্রুতই সরে যাচ্ছে বেড়িবাঁধের গোড়ার মাটি। জোয়ারের সময় সাগরের ঢেউ এসে লাগছে মসজিদের দেয়ালের সাথে।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ পরবর্তী ঝড়ো হাওয়ায় গহিরা উপক‚লের উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় মারমেইড-৩ নামের একটি বার্জ ও নাভিমার-৩ টাগবোট জাহাজ দুটি আটকে পড়ে। বাতাসের তীব্রতায় জাহাজ দুটি আছড়ে পড়ার সময় বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন রোধে স্থাপিত জিও টিউবের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাছির বলেন, এক বছর আগেও এখানে সাগর ছিল ৩০০ ফুট দূরে। তীব্র স্রোত ও ভাঙ্গণে এখন তা বেড়িবাঁধে এসে ঠেকেছে। ৩৬০ পরিবারের বিশাল সমাজের শতাধিক মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন। ঘাটের মাছ ধরার মাঝিরাও এই মসজিদে নামাজ পড়েন। চোখের সামনে মসজিদটা বিলীন হওয়ার অবস্থা। বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় ৩৬০ পরিবারের অনেকে বাপ দাদার ভিটামাটি ছেড়ে যাচ্ছেন।
এদিকে আটকে পড়া মারমেইড-৩ নামের বার্জ ও নাভিমার ৩ টাগবোট জাহাজটি সরানোর বিষয়েও কোনো সুখবর নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জাহাজ দুটি গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে জব্দ রয়েছে বলে জানা গেছে। জাহাজ দুটি বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় জোয়ার-ভাটার স্রোতে কখনো কুতুবদিয়া, কখনো মগনামাসহ বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ভেসে বেড়ায়। সর্বশেষ গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র আঘাতে গহিরা উঠান মাঝির খাটু উপকূলে আটকে পড়ে। আর এতে কপাল পুড়েছে স্থানীয়দের। যার প্রভাবে ভাঙ্গনের তীব্রতা আগের চেয়ে আরো কয়েকগুণ বেড়েছে। বর্তমানে কোস্টগার্ড সদস্য ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়াচম্যানরা জাহাজ দুটির পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয়রা অতি দ্রæত জাহাজ দুটি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, আনোয়ারার রায়পুর উপকূলে বেড়িবাঁধের উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিভিন্ন অংশে জিও টিউব বসানো হয়েছে। আটকে পড়া জাহাজ দুটির কারণে আমাদের স্থানীয় মসজিদ, কবরস্থান ও বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। জাহাজ দুটি যাতে দ্রæত সময়ে মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে আমরা জাহাজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পূর্বকোণ/ইবনুর