চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে বান্দরবানের দুর্গম এলাকার
স্বাভাবিক হয়ে আসছে বান্দরবানের দুর্গম এলাকার পরিস্থিতি

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে বান্দরবানের দুর্গম এলাকার

মিনারুল হক, সুংসং পাড়া ঘুরে এসে

২৮ জুন, ২০২৫ | ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্নিবার পাড়ার বাসিন্দা রোয়াললিং বম। গত বছরের শুরুর দিকে এলাকার পরিস্থিতি একেবারেই যখন খারাপ হয়ে পড়েছিল তখন তিনি উপায়ান্তর না দেখে পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফএ যোগ দিয়েছিলেন। পরিবারের সাথে তার কোন যোগাযোগই ছিল না। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানে কখনো গভীর জঙ্গলে কখনো সীমান্ত এলাকায় আবার কখনো সীমান্ত পেরিয়ে মিজোরামে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসছিল এবং অনেকেই যখন ঘরে ফিরেছিল তাদের সাথেও তিনি এলাকায় ফিরে আসেন।

 

নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে আত্মসমর্পণের আহ্বান শুনে সম্প্রতি রোয়াললিং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। তার মত রুমা উপজেলার তামলৌ পাড়ার লালপেক লিয়ান বমও সন্ত্রাসী জীবন ছেড়ে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে। ফিরে আসা আত্মসমর্পণকারী এসব সদস্যদের নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন থেকে দেওয়া হচ্ছে নানা সুবিধা। কেএনএফ’র শুধু যে এই দুই সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন তা নয় অস্থির পরিস্থিতির কারণে পালিয়ে থাকা এরকম ৮৯ পরিবারের তিন শতাধিক নারী পুরুষ শিশু ফিরে এসেছেন রুমা রোয়াংছড়ির বিভিন্ন পাড়ায়। যারা পাশের ভারতের মিজোরামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল

 

সেখানের অনেক পরিবার ফিরে এসেছে এলাকায়। এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে দুর্গম পাড়াগুলোতে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। ফিরে আসা লোকজন তাদের জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি সংস্কার করছেন আবার অনেকে জুম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ভারত মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন সুংসং পাড়ায় বম স্যোশাল কাউন্সিল ও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল মতবিনিময় সভা। সেখানে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার, বান্দরবানের রিজিয়ন কমান্ডারসহ বম স্যোশাল কাউন্সিলর নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

 

তারা বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কারণে পাড়াগুলোতে লোকজন ফিরে আসছেন। যারা ফিরে আসছেন ও আত্মসমর্পণ করছেন তাদেরকে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন থেকে নানা সুযোগ সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানান বম স্যোশাল কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ।

 

বম স্যোশাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগেও দুর্গম এলাকার অনেক পাড়া গ্রাম খালি পড়েছিল। সন্ত্রাসী তৎপরতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আতঙ্কিত পাড়ার লোকজন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। অনেকে আবার ভারতের মিজোরামে চলে গিয়েছিল। তবে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমে যাওয়ায় এবং নিরাপত্তাবাহিনীর নানামুখী তৎপরতা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ের কারণে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

 

রেমাক্রি প্রাংশা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জিরা বম জানান, যারা এখনো এলাকার বাইরে রয়ে গেছেন এবং যারা সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছেন তাদেরকে নানা ভাবে আহ্বান জানানো হচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় সবাই এলাকায় ফিরে আসবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

 

নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আতিকুর করিম জানিয়েছেন, সন্ত্রাস নির্মূলে নিরাপত্তা বাহিনী যেমন কোনভাবেই ছাড় দিচ্ছে না অপরদিকে যারা সন্ত্রাস ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন তাদের নানামুখী সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আগের মত পরিস্থিতি থাকুক এটা কেউই চায় না। স্থানীয়দের সাথে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বাহিনী এলাকার পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।

 

উল্লেখ্য ফেসবুকে পেজ খুলে বছর ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ। বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় সশস্ত্র হামলা করে টাকা ও অস্ত্র লুটের পর আলোচনায় আসে এই সশস্ত সংগঠনটি। গত দু’বছরে এই সংগঠনটির সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ৬ সেনা সদস্যসহ অন্ততপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়। গ্রেপ্তার করা হয় কেএনএফের দেড়শতাধিক সদস্যকে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট