চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক ব্যক্তিকে মারধর ও ছুরিকাঘাতের ঘটনায় সালিশি বৈঠককে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক মহিলাসহ ৮ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। রবিবার (৮ জুন) দুপুরে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়কুল নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, মো. ইদ্রিস মিয়া (৬৫), মুরাদ হোসেন (২৭), মো. শেফায়েত (২৭), মো. জুনায়েদ (২৫), মো. ছাবের হোসেন (২৮), মো. শফিক (২০), মাহমুদুল হক (৫০) ও জোবেদা খাতুন (৪৫)। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং অনেকেই এখনও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বলে আহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে অভিযুক্তরা হলেন, একই এলাকার মো. আয়াত (১৮), রেজাউল করিম (২০), মো. মহিউদ্দিন (২৫), মনির হোসেন (২২), জামাল হোসেন (৪৫), বেলাল হোসেন (২২), সৈয়দ আমিন (৪০), আনোয়ার হোসেন (২৮), হেলাল উদ্দিন (২০) ও মো. আরাফাত (১৮)।
পাহাড়কুল নয়াপাড়ার বাসিন্দা রবিউল আউয়াল বলেন, ঈদের আগের দিন আমার বসতঘরের টিনে ঢিল নিক্ষেপ করার বিষয় নিয়ে রেজাউল করিম, মো. আরাফাত ও মো. আয়াত আমাকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করেন। পরে আমি বিষয়টি আমি সমাজপতি ইদ্রিস মিয়াকে জানানোর পাশাপাশি সাতকানিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। এর প্রেক্ষিতে সমাজপতি উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি সালিশি বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন। সালিশি বৈঠকটি পণ্ড করার জন্য অভিযুক্তরা সমাজপতির ওপর হামলা চালায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে অভিযুক্তরা চার রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পুনরায় এলাকাবাসীর উপর হামলা চালায়। আহত ও সমাজপতি মো. ইদ্রিস বলেন, পূর্ব থেকে নির্ধারিত বৈঠকে আমিসহ সমাজের অন্যান্য লোকজন উপস্থিত হলে অন্তত প্রায় দেড় শতাধিক যুবক আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এর মধ্যে এক হামলাকারী শর্টগান নিয়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসে।
মো.ইদ্রিস আরও বলেন, হামলাকারীরা আমার স্ত্রী এবং পুত্রবধূর উপর হামলা চালিয়ে ঘরের স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। বৈঠকে যারা এসেছিলেন, তাদের অনেকের মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আমি তিনজনের হাতে শর্ট গান দেখেছি। কিছু দূরে আরও একটি গ্রুপ ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর মধ্যে একজন আমার মাথায়-গায়ে বেধড়ক মারধর করে, এক পর্যায়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।
উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম ওই সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এক পক্ষের লোকজন বিপুলসংখ্যক এলাকাবাসী নিয়ে সালিশি বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিল। কিন্তু অপর পক্ষের লোকজন সালিশি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় বৈঠকটি একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর একপর্যায়ে সালিশি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকা লোকজন দলবল নিয়ে সমাজপতি ও এলাকাবাসীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে অভিযুক্ত মো. আয়াতের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তফিকুল আলম বলেন, দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। গোলাগুলির বিষয়ে স্থানীয়রা আমাদেরকে জানিয়েছেন। অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে। সংঘর্ষের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
পূর্বকোণ/মুন্না/আরআর