চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে রেললাইনের উপরে প্রতিদিন বসছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পশুরহাট। এতে ট্রেন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকির পাশাপাশি যেকোন মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রেলপথের উপরেই বাজার বসছে। স্টেশন মাস্টারের আপত্তি সত্ত্বেও নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে বাজার ইজারাদার নিয়মিত এ পশুর হাট পরিচালনা করে আসছেন।
সরেজমিনে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, হাটহাজারী পৌরসভা কর্তৃক ইজারাকৃত চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেললাইনের উপর প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আপত্তি উপেক্ষা করেই হাটহাজারী স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পশুরহাট পরিচালনা করছেন বাজার ইজারাদাররা। বিক্রেতারা সিগন্যাল, রেলের স্লিপার বা পয়েন্টের চাবির সঙ্গে গরু বেঁধে বিক্রি করছেন। অনেকে গরু, ছাগল নিয়ে রেললাইনের ওপরেই বসে থাকছেন। ট্রেন এলে শুরু হয় ছুটোছুটি। এতে করে যেকোন মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, এতে করে ট্রেন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, হাটহাজারী স্টেশন এলাকায় স্থানীয় লোকজন ও বাজার কমিটির সমম্বয়ে গরু-ছাগল বেচাকেনার জন্য পশুরহাট পরিচালিত হয়। স্টেশন এলাকার বাউন্ডারি ও সীমানা প্রাচীর না থাকায় বাজারে ক্রয় বিক্রয় করার জন্য নিয়ে আসা গরু রেললাইনের উপর অবস্থান করে। রেললাইনে পশুরহাট বসার জন্য রেললাইনে দেওয়া পাথরসমূহ রেললাইন হতে সরে যাচ্ছে এবং ট্রেন চলাচলের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেলপথের নিরাপত্তার স্বার্থে পশুরহাট না বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা চট্টগ্রামকে জানানো হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গরু বিক্রেতা মো. আব্দুল্লাহ ও ক্রেতা ও মোহাম্মদ রহিম উদ্দিন বলেন, রেললাইনের উপর পশুরহাট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ইজারাদার ও পশুরহাট আয়োজকরা এখানে স্থান দিয়েছেন, ঝুঁকি জেনেও কেউ কিছু বলছেন না। তাছাড়া ট্রেন আসার শব্দ অনেক সময় শোনাও যায় না। যেহেতু বাজার ইজারা হচ্ছে এবং সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে সেহেতু পশুরহাটের নির্দিষ্ট ও নিরাপদ জায়গা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এখানে পশুরহাটের মতো কোনো স্থান নেই। বাজার ইজারাদার কোনোকিছু তোয়াক্কা না করেই নিজের ইচ্ছেমতো পশুরহাট পরিচালনা করছেন এখানে।
রেললাইনে ঝুঁকিপূর্ণ পশুরহাটের বিষয়ে জানতে চাইলে পশুরহাটটির ইজারাদার মো. শাহেদুল আজম শাহেদ জানান, পশুর হাটটি ইজারা নেয়ার পর তিনি মো. ইব্রাহিম সওদাগরসহ বেশ কয়েকজনকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা বিক্রেতাদের বারবার সতর্ক করছেন যাতে তারা যেন রেললাইনে স্লিপারের সাথে কোনো পশু না বাঁধেন। আর কেউ না বুঝে বাঁধলেও ভলান্টিয়াররা তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জয়নাল আবেদীন বলেন, এখানে গরুর বাজার না করার জন্য বারবার নিষেধ করেছি। তাছাড়া রেলওয়ে এলাকায় সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। তারপরও সংশ্লিষ্টরা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করে পশুর হাট বসিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমি লিখিত আকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
রেল লাইনের উপর গরুর বাজারের বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষোলশহর ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কাশেম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, হাটহাজারী স্টেশন মাস্টার অবৈধ স্থাপনা, রেললাইনে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ পশুর হাটের বিষয়টির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমার অফিসসহ রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার বিভগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ও হাটাজারী পৌরসভার প্রশাসক মো. নোমান হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি আজকে (বুধবার) যোগদান করেছি। এই বিষয়টি আমি এখনি অবহিত হয়েছি এবং সমাধানকল্পে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
পূর্বকোণ/পিআর