চট্টগ্রাম রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

রামুতে হত্যাসহ ১৯ মামলার আসামি ডাকাত শাহীন গ্রেপ্তার

রামুতে হত্যাসহ ১৯ মামলার আসামি ডাকাত শাহীন গ্রেপ্তার

রামু সংবাদদাতা

৫ জুন, ২০২৫ | ২:২৩ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামুর পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জাউচপাড়া নামক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঝিলংজা ক্যাম্পের দায়িত্বরত মেজর শাহরিয়ার। এ বিষয়ে সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে গর্জনিয়া এলাকায় প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

রামু উপজেলার পূর্বাঞ্চলের অস্ত্র, গরু, মাদক চোরাচালানসহ বহু মামলার আসামি, শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীনের ডেরায় গত ২৫ মে অভিযান চালিয়েছিল যৌথবাহিনী। ওই অভিযানে অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা ও ওয়াকিটকি উদ্ধার হলেও কৌশলে সটকে পড়ে ডাকাত শাহীন।

পুলিশের তথ্য বলছে, সিআর ও জিআর মামলা এবং জিডিসহ প্রায় ১৯ মামলার পলাতক আসামি ডাকাত শাহীন। তার মামলার মধ্যে ৯টি ডাকাতি, ডাকাতি প্রস্তুতি ও ছিনতাই, ৪টি হত্যা মামলা, দুটি অস্ত্র মামলা, দুটি মাদক মামলা এবং বাকিগুলো বিভিন্ন থানায় জিডি হিসেবে রয়েছে।

 

জানা গেছে, সীমান্ত জনপদের এক আতঙ্কের নাম ডাকাত শাহীন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সীমান্ত এলাকার লোকজন। তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পেত না। ফলে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন। খুন, ডাকাতি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, একচ্ছত্রভাবে গরু ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ, মতের বিরোধ থাকা লোকজনকে এলাকা ছাড়াসহ এমন কোন অবৈধ কাজ নাই সে করে নাই।

শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন হচ্ছে মূলত ধনীর ঘরের আদরের দুলাল। কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়ার জমিদার হাজী ইসলামের সন্তান সে। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো সন্তান বড় হয়ে গর্জনিয়াবাসির সেবার হাল ধরবে। হাল ধরেছে ঠিকই, তবে তা সমাজসেবা বা এলাকার মানুষের কল্যাণে নয়। একের পর খুন, ডাকাতি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, একচ্ছত্রভাবে গরু, মাদক ও সিগারেট পাচার নিয়ন্ত্রণ। মতের বিরোধ থাকা লোকজনকে এলাকা ছাড়াসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নাইক্ষংছড়ি ও রামু সীমান্তের জনপদে। গর্জনিয়ায় পৃথক পুলিশ ফাঁড়ি, বিজিবি ক্যাম্প থাকলেও সেখানে আইন চলতো শাহীনের। বলা চলে শাহীনের হাতে স্বাধীন দেশের পরাধীন এক ভূখন্ড রামুর পূর্বাঞ্চল ও পাশ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পড়াশোনার জন্য পরিবার থেকে শাহীনকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পাঠালেও সেদিকে মন না দিয়ে চলে আসেন গ্রামে। অপরাধ জগতে পা দেয় ঈদগড়ের ভয়ঙ্কর ডাকাত কালু, কলিমুল্লাহসহ কয়েকজনের হাত ধরে। শুরুতে ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কে ডাকাতি করতে গিয়ে আটক হয়ে জেলে যায় শাহীন। সেখান থেকেই ঘুরে যায় জীবন। সন্ত্রাসীদের অনুসারী থেকে হয়ে উঠে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান। ২০১২ সালে সন্ত্রাস জগতে পা রাখা শাহীন এখন সীমান্তের অপরাধ জগতের ডন।

 

সুত্রে জানা যায়, ৫’শ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত গরু অবৈধভাবে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিটি গরু থেকে ৩ হাজার টাকা করে দিতে হতো শাহীনকে। শুধু গরু নয়, সাথে আসে আইস, ইয়াবা, সিগারেটসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য যার মূল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে শাহীন। গরু, আইস, ইয়াবা, সিগারেট চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সীমান্তের এই এলাকায় বেড়ে যায় খুনোখুনির ঘটনাও। শাহীনের গরু এবং ইয়াবা পাচারে কেউ নূন্যতম বাঁধা হলেও তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো বলে জানায় এলাকাবাসী। এক এক করে সীমান্তের এই এলাকাগুলোতে গত কয়েক বছরে অন্তত ডজনাধিক খুনের নেতৃত্ব দিয়েছে শাহীন।

 

২০২৩ সালের ৩ মার্চ। সেদিন ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয় গর্জনিয়ার বেলতলীর মানুষ। এলাকাবাসীরা জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ির শফিউলাহর ছেলে ইরফানকে ডাকাত শাহীন তার নিজের মোটরসাইকেলে বসিয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে নৃসংশভাবে।

 

স্থানীয় আবুল কাশেম। ২০২৪ সালের ৮ মে মধ্যরাতে শাহীন তাকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নারাইম্মাজিরি পাহাড়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে হত্যা করে। নিহত আবুল কাশেমের ভাই মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ডাকাত শাহীন গ্রুপের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে তার ভাইকে বাড়ি থেকে ডেকে পাহাড়ে নিয়ে যায়। এরপর গুলি করে হত্যা করে। আবুল কাশেম কৃষি কাজের পাশাপাশি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। ডাকাত শাহীনের নেতৃত্বে অবৈধ গরু পাচারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আবুল কাশেম। সে কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের দাবি। তাছাড়াও গরু পাচারে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করায় ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ গর্জনিয়ার থিমছড়ির আহমদুর রহমানের ছেলে আবু তালেবকে নির্মমভাবে হত্যা করে ডাকাত শাহীন।

 

এদিকে সেনাবাহিনীর অভিযানে ডাকাত শাহীন আটক হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্রের মানুষ স্বস্তির নি:শ্বাস নিচ্ছে। এলাকার জনগণ সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট