রামগড়ে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের বিদেশি আম
রামগড়ে পাহাড় জুড়ে বিদেশি আমের রাজত্ব
পার্বত্য জেলার পাহাড়ে পাহাড়ে গড়ে উঠা বাগানে থোকায় থোকায় দুলছে নানান জাত ও রঙের বিদেশি আম। আমেরিকান পামলার, রেড আইভরি, রেড এম্পেরর বা চাকাপাত, ব্যানানা ম্যাংগো, কার্টিমন, কিউজাই, রেড লেডি, আপেল ম্যাংগো, মিয়াজাকি বা সূর্যডিম, অস্ট্রেলিয়ান কেনসিংটন প্রাইড, হানিডিউ, আরটুইটুসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি আমের চাষ করেছেন এখানকার চাষিরা।
উপযোগী মাটি ও আবহাওয়ায় অধিক ফলন এবং প্রচলিত দেশি আমের চেয়ে বাজার দর কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় বিদেশি আম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। মূলত ২০০৪ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ফল বাগানের সংখ্যা। ২০০৩- ২০০৪ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির বিএনপি দলীয় সাংসদ ওয়াদুদ ভূঁইয়ার উদ্যোগে নেওয়া ‘কালিকাপুর মডেল প্রকল্পে’র আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় বিদেশি জাতের আম আম্রপালির চারা বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। বাসিন্দারা অনাবাদি টিলাভূমিতে এ আমের চারা রোপণ করে দুই বছর পরই ফল পেতে শুরু করে। পরবর্তীতে আম্রপালির সাথে যোগ হয় মিয়ানমারের রাংগুই আম।
গত ৪-৫ বছরে পাহাড়ের মাটিতে ঠাঁই নেয় জাপানের বিশ্বখ্যাত মিয়াজাকিসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি আম। খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জমিতে বিদেশি জাতের সফল আম চাষিদের একজন সদর উপজেলার মংশিতু চৌধুরী। সদর উপজেলার ভূয়াছড়ি এলাকায় মং গ্রীণ লাইফ এগ্রোফার্মের মালিক মংশিতু চৌধুরী ২০১৪ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে আম চাষে নামেন। প্রায় ৩০ একরের তার বাগানে প্রায় ৫৪ জাতের বিদেশি আমের চাষ হচ্ছে। তিনি এই মৌসুমে ৫০ লাখ টাকার আম বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
রামগড়ের আরেক সফল আম চাষি রুবেল জানান, এরইমধ্যে বাগান থেকে আম সংগ্রহ ও বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। তিনি এবার প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম ২৫০ টাকা, রেড আইভরি ২০০ টাকা, রেড এম্পেরর বা চাকাপাত ২৫০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান আরটুইটু ১৫০ টাকা, বানানা ১৫০ টাকা, ফোর কেজি আম ১৫০ টাকা ও হানিডিউ ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন আম্রপালি।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. বাছিরুল আলম জানান, খাগড়াছড়ি জেলায় এবার ৪ হাজার ৪২১ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বেশি হয়েছে আমের চাষ। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৪ হাজার ১৭৯ মেট্রিক টন।
পার্বত্য এলাকায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ কৃষি গবেণা ইন্সটিটউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কমকর্তা (অব.) ড. জুলফিকার আলি ফিরোজ বলেন, পাহাড়ে আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। এখন তিন পার্বত্য জেলাকে ফ্রুটজোন ঘোষণা সময়ের দাবি। তিনি বলেন, ফল আবাদ, বিপণন ও পরিবহনে সরকারি ব্যবস্থাপনা জরুরি।
পূর্বকোণ/ইবনুর